ভন্ডপীর আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারির প্রমাণ

প্রকাশঃ আগস্ট ৩, ২০১৭ সময়ঃ ৮:৪৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

‘ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার শতাধিক নারীকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেছে’ এমন ১০০টি ভিডিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ইমো-তেও অসংখ্য নারীর সঙ্গে পিয়ারের ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ও ভিডিও ক্লিপ জব্দ করা হয়েছে।এছাড়া এই প্রতারক ইসলাম প্রচারের নাম করে ঠকিয়ে বিদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

দুই দিনের রিমান্ডে পুলিশকে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এ ভণ্ডপীর।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইসলাম প্রচারের নামে সাহায্য হিসেবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। দুই দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিতে শুরু করেছে ভণ্ডপীর পিয়ার। তার গ্রেপ্তারের পর বেশ কয়েকজন প্রতারিত নারীও তথ্য দিতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসেন। আবার অনেকে ফোনেও তার প্রতারণার বিচিত্র তথ্য দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার তাকে দুই দিনের রিমান্ডের অনুমতি পায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা কার্যালয়ে তার জিজ্ঞাসাবাদ করা চলছে।

পিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার গত এক বছরে জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে শতাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এ কাজে তার বাসা ও উত্তরার কয়েকটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেছে। ঐ কর্মকর্তারা জানান, উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও কৌশলে ভিডিও ধারণ করেছে। ভিডিওগুলো পরবর্তীতে তার কম্পিউটার ও মোবাইলে রাখে।

গ্রেপ্তারের সময় কিছু ভিডিও উদ্ধার হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর সে আরো ভিডিও ধারণের তথ্য দেয়। পরবর্তীতে ভিডিওগুলো গোয়েন্দাদের দেয়। গোয়েন্দাদের এক প্রশ্নে পিয়ার জানায়, বাসার পাশাপাশি উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে এ কাজ করেছে। 

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার তার ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য দেয়। গোয়েন্দারা তার অ্যাকাউন্টে গত কয়েক মাসে ২০ লাখ টাকার লেনদেন দেখতে পান। তার অ্যাকাউন্টের টাকা দেশের বিভিন্ন এলাকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা। ইসলাম প্রচারের সুবিধার্থে প্রবাসী নাগরিকরা সরল বিশ্বাসে তার অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো পাঠিয়েছে। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে প্রবাসী ও দেশের লোকদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। মূলত ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও ছেড়ে লোকজনের সহানুভূতি অর্জন করতো এই প্রতারক। বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সব মিলিয়ে ৩০ লাখের বেশি টাকা লেনদেন করেছে বলে জানা গেছে গত কয়েকমাসে। গোয়েন্দারা বলেন, তার আর কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না, জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে এই ভন্ডপীরের ফাঁদে পড়া নাটোরের এক প্রতারিত তরুণী বলেন, মহিলাটি সৌদি আরবে থাকার সময় ফেসবুকে এই ভন্ড পীরের  তার পরিচয়। ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সে প্রেমের অফার দেয়। ইসলাম ও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়।তিনি বলেন, বুধবার তার গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর তিনি গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, সে আসলেই একজন ভণ্ড। ইসলামের লেবাসে তার মতো অসংখ্য নারীর সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে। 

প্রতারিত আরেক নারী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর সে ইসলাম প্রচারের কথা বলে। নিজেকে অসহায় উল্লেখ করে তার কাছ থেকেও টাকা চায়। তিনি ৪ মাসে তাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনিও পিয়ারের শাস্তি দাবি করেন।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে প্রতারণার সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিজেকে ইসলামের লেবাসে এভাবে প্রতারণার ঘটনা বিরল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা তার কাছ থেকে ১০০টির বেশি পর্নো ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছি। প্রত্যেকটি ভিডিও পৃথক নারীর। এছাড়াও তার ইমো-তে ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, তার গ্রেপ্তারের খবরে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে অসংখ্য নারী অভিযোগ করছেন। আমরা প্রতারিত নারীদের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, প্রতারিত নারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে পর্নো ভিডিও ধারণকারী ও ভণ্ড পীর আহসান হাবিব পিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। পরে তাকে আদালতে পাঠালে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G