ভালো থেকো জীবনানন্দ

প্রকাশঃ অক্টোবর ২২, ২০১৫ সময়ঃ ৩:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০০ অপরাহ্ণ

-jibananandash_copyবাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সূর
সত্যিই যেন সাহিত্যের মাঝে সবুজ সুন্দর বাংলাদেশ খুজতে গেলে জীবনানন্দকে খুজি সবাই। বাংলাদেশের অবারিত প্রান্ত কিংবা নির্মল কোনো রমনীয় প্রেমের সাগরে অবগাহনে ভাসতে গেলে যেন জীবনানন্দই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জীবনের নানা সময়ে নানা মাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই জীবনানন্দ মিশে আছে। কবিতায় কিংবা ভাষার মাধুর্য্যে জীবনানন্দ যেন অশান্ত হৃদয়কে করে তোলে শান্ত।
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে ;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারি দিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
কুড়ি বছর পরে

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে-
কার্তিকের মাসে-

 

ঘাস

কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
পুথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;
কাঁচা বাতাবির মতো সবুজ ঘাস-তেমনি সুঘ্রাণ-
হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছে।

হাওয়ার রাত

গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল- অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;
সারারাত বিস্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে;
মশারিটা ফুলে উঠেছে কখনো মৌসুমী সমুদ্রের পেটের মতো,
কখনো বিছানা ছিঁড়ে

আমি যদি হতাম

আমি যদি হতাম বনহংস;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোন এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে

প্রতিটি কবিতাই যেন প্রকৃতির সাথে অপার প্রেমের এক অনন্য চিত্র।
“সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি – কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিনত্মার ও অভিজ্ঞতার সারবিত্ত রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন’ সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিনত্মার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।” হ্যা এভাবেই জীবনানন্দ নিজেকে করেছেন প্রকাশ। তাই তার প্রবন্ধগুলোও ছিল কবিতাকেন্দ্রিক। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলো হলো- ‘কবিতার কথা’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক বাংলা কবিতা’, ‘মাত্রাচেতনা’, ‘উত্তররৈবিক বংলা কাব্য’, ‘কবিতার আত্মা ও শরীর’, ‘কি হিসাবে কবিতা শ্বাশত’, ‘কবিতাপাঠ’, ‘দেশকাল ও কবিতা’, ‘সত্যবিশ্বাস ও কবিতা’, ‘রুচি, বিচার ও অন্যান্য কথা’, ‘কবিতার আলোচনা’, ‘আধুনিক কবিতা’, ‘বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ’, ‘কেন লিখি’, ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘শরৎচন্দ্র’, ‘কঙ্কাবতী ও অন্যান্য কবিতা’, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ’, ‘পৃথিবী ও সময়’, ‘যুক্তি, জিজ্ঞাসা ও বাঙালি’, ‘অর্থনৈতিক দিক’, ‘শিক্ষা ও ইংরেজি’, ‘শিক্ষা-দীক্ষা-শিক্ষকতা’, ‘শিক্ষার কথা’, ‘শিক্ষা সাহিত্যে ইংরেজী’ এবং ‘শিক্ষা-দীক্ষা’।
জীবনানন্দ দাশের জন্ম বরিশাল শহরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯। মৃত্যু ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে কলকাতায়। আজ তার মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দূর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান আপাদমস্তক এ কবি। তার বিখ্যাত উপন্যাস মাল্যবান (১৯৭৩), সুতীর্থ (১৯৭৭), চারজন। আর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ রূপসী বাংলা (১৯৫৭), দর্শনা (১৯৭৩), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গম, হে প্রেম তোমার কথা ভেবে (১৯৯৮), অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯) এবং আবছায়া (২০০৪)।

প্রতিক্ষণ/এডি/এসএবি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G