ভূমিকম্পে মৌলভীবাজারে রাস্তায় ভয়ানক ফাটল
গতকালকের ঘটে যাওয়া ত্রিপুরার ভূমিকম্পে মৌলভীবাজারে শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা গেছে, অসংখ্য মাটির দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে; বিভিন্ন জায়গায় জমি থেকে পানি ও বালি-কাদা বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এছাড়া দেয়াল ধসে, ভবনের ইট পড়ে ও বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ৯মিনিটে ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব এবং আগরতলা থেকে ৭৬ কিলোমিটার পূর্বে। উপকেন্দ্র ছিল ত্রিপুরার আম্বাসা এলাকায়, ভূপৃষ্ঠের ৩৬ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।
ভূমিকম্পের পরপরই শহরের কুদরত উল্লাহ সড়কের সৈয়দ আকবর আলী টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আগুন ধরার খবর মেলে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শ্রীমঙ্গলে পাওয়ার গ্রিডের জাম্পার আলগা হয়ে গেলে কয়েক ঘণ্টার জন্য শতাধিক গ্রামের অধিবাসীরা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকেন।
জেলা পরিষদের ৫০০ আসনবিশিষ্ট মিলনায়তনের পূর্ব দিকের বারান্দা দেড় ফুট দেবে গেছে, ভবনজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ফাটল। ভবনটির ভেতরে ইট ও বাইরের সিলিং থেকে আস্তর খসে পড়েছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ জানান, ভূমিকম্পে পৌর ভবনসহ শতাধিক বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলার ফুটবল খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থানের জমি ফেটে পানি ও বালি বের হয়ে এসেছে।
পৌর এলাকার ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মুহিবুর রহমানের জমি ফেটে ভূগর্ভস্থ বালু ও পানি বেরিয়ে এসেছে। কান্দিগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের বাড়ি ও রান্নাঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল।
হেরেংগা বাজারের পশ্চিমে বনগাঁও রাস্তায় ধলাই নদির পাড়ে, পৌর এলাকার কুমড়াকাপন গ্রামের রাস্তা, রানীরবাজার এলাকার একটি রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভানুগাছ বাজারের গাউছিয়া আরমান হার্ডওয়ার নামের একটি দোকানে রাখা লক্ষাধিক টাকার কাচ ও টাইলস ভেঙে গেছে। ওই বাজারের ১৫-২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ভানুগাছ পৌর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, ভানুগাছ ছাড়াও উপজেলার নছরতপুর, পশ্চিম বালিগাঁও, শিমুলতলা, হীরামতি, রায়নগর, মাধবপুর, কুমড়াকাপন, চৈতন্যগঞ্জ, নারাইনপুর, চিৎলিয়া, রানীরবাজার, জালালপুর, রামপুর, কান্দিগাঁও, পতনঊষার, আদমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক ভবন ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শ্রীমঙ্গলে সরকারি শিশু পরিবারের ভবন, পৌরসভার নিয়ন্ত্রানাধীন কাঁচাবাজার ভবন, লালবাগ এলাকার সুলতান আহমদের বাসা, সুব্রত চক্রবর্তীর বাড়ির সীমানা প্রাচীরে ফাটল ধরেছে।
ভূমিকম্পে দেয়াল ভেঙে, ইটের আঘাতে ও বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মৌলভীবাজারে অন্তত ১৫ জনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে। এদের মধ্যে শমশেরনগর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম (৪০), কমলগঞ্জ পৌরসভার বড়গাছ এলাকার আমিন মিয়া (৪৫), আদমপুর ইউনিয়নের উত্তর ভানুবিল গ্রামের উজ্জ্বল সিংহকে (২০) কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন জালাল মিয়া (১০), রবি ভট্টাচার্য্য (৫০), আরিফ মিয়া (৭০), সোনিয়া (৪০), নার্গিস বেগম (১৮), ফখরুল ইসলাম (৩০), জনি বেগম (৩৩), মেহেদী হাসান (৭০) আব্দুস সোবান (৭৭), রেহেনা বেগম (১৬), রোজিনা বেগম (৩৩) ও রেজাক মিয়া (২২)।