ভেজালে সয়লাব রাজধানীর ইফতার বাজার! (শেষ পর্ব)
জহির উদ্দিন মিশু
রোজা শেষে ইফতারে ভাজা-পোড়া খাওয়ার চেয়ে ফলফলাদি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এমন প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে রোজাদাররা ইফতারে ফল খাওয়া বাড়িয়ে কি নিজেদের বিপদ বাড়িয়েছেন এমন প্রশ্ন আর উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ বাজারে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন ভেজালমুক্ত ফল পাওয়াই কঠিন। দাম যাই হোক, যে ফলেই হাত দিবেন, সেটা যে বিষমুক্ত নয় তা নিশ্চিত করে বলার কেউ নেই।
অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় ফল-ফলাদিসহ খাদ্যপণ্য ও পানীয়ের বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের মুনাফাও বেড়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত মুনাফার লোভেই খাদ্যপণ্যে ভেজালের দৌরাত্ম্যও বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে যারা ভেজাল খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেন তাদের সংখ্যা। ফলের বিষে তারা নিজের অজান্তেই ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিসের মতো মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
আম, কলা, নাসপাতি, আপেল, কমলা এমনকি কাঁচাবাজারের টমেটোও শক্ত হয়ে থাকে দিনের পর দিন। মাছের বাজারেও ফরমালিনের ছড়াছড়ি। এভাবে বিষাক্ত ভেজাল খাদ্যপণ্যে ছেয়ে গেছে বাজার।
কয়েক দিন আগে, ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় অভিজাত এলাকা উত্তরার আরো অভিজাত ট্রাস্ট ‘ফ্যামিলি নিডস’ শপে। একটি বিশাল ভবনের চারটি ফ্লোর নিয়ে এই সুপার শপ। আর দোকানের প্রবেশ পথের দু’পাশে তাদের সুপরিসর ইফতারি বাজার। ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রথমেই রান্নাঘরে অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযান চালতে গিয়ে আদালতের সদস্যরা ‘থ’। রান্নাঘর বলতে দুটি ভবনের মাঝখানে ফাঁকা অপরিসর জায়গা। যত বড় শপ ঠিক তত সংকীর্ণ তার রান্নাঘর। আর সেখানেই নোংরা পরিবেশে তৈরি হয় নানা ‘সুস্বাদু’ ইফতার। সেই রান্নাঘরের ফ্রিজ থেকে বের করে আনা হয় পঁচা মুরগির মাংস। পরিমাণে প্রায় ২০ কেজি। তা দিয়েই হয়ত বানানো হতো চিকেন ফ্রাই।
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বরেন চক্রবর্তী জানান, অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও ময়লাযুক্ত খাবারগুলো হৃদরোগের জন্য দায়ী। আর হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও ঘটতে পারে এ কারণে।
ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু রমজান উপলক্ষে ভেজাল বিরোধী তৎপরতা বাড়ানো হলেও কমেনি খাদ্যে ফরমালিন, বিষাক্ত ক্যামিকেল ও রঙ মেশানোর পরিমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশের প্রতিটি খাবার জাতীয় পণ্যে ভেজাল মিশ্রিতকরণ নতুন কিছু নয়। এ ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে কালক্ষেপণ করা সহ গুরু শাস্তির ব্যবস্থা না করায় ভেজাল মিশ্রিত খাবারের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এ অবস্থা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে প্রয়োজন কালক্ষেপণ না করে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গণস্বাস্থ্য বিভাগ এগিয়ে আসার বিকল্প নেই।