মঙ্গলের সমর্থন হোক শান্তির পথে

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫ সময়ঃ ২:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৪৯ অপরাহ্ণ

nuhu১.
আগে একটা গল্প বলি…
এক গরীবের ঘরের একটি সুন্দরী মেয়ের গল্প এটি।
সত্য ঘটনা।

১৯৯৫ সাল। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। পড়তাম টাঙ্গাইলে। আমার এক বছরের সিনিয়র কালিহাতির এক বড় ভাই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। প্রায় আমাকে তার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার দাওয়াত দিতেন। বড় ভাইয়ের নাম ছিল বাহাদুর।
অবশেষে এক বর্ষায় তিনি বাড়ি গেলেন। তার গ্রামের নাম জানতাম। তাকে সারপ্রাইজ দিতে একদিন পর আমিও চলে গেলাম।
গিয়ে পড়লাম বিপদে! তখন প্রায় সন্ধ্যা। তারওপর চারদিকে পানি আর পানি।

ইউনিয়নটির নাম মনে নেই। বাজার থেকে একটা প্রধান রাস্তা বের হয়েছে। কেবল সেটিই ভাসমান লম্বা দ্বীপের মতো চলে গেছে দূরে। রাস্তার দুপাশে আশেপাশের গ্রামে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাহন ছোট ছোট নৌকা অপেক্ষা করছে পানির ওপর।

তারই একটি নিয়ে নিলাম বাহাদুর ভাইয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য।
শুরুটা ভালো ছিল। সেদিন আকাশে চাঁদও ছিল। তরুণ বয়স, থৈ থৈ পানির ওপর চাঁদের আলোয় নৌকায় ভেসে যাওয়ার সে অনুভতি… ব্যক্ত করা প্রায় অসম্ভব! শুধু এটুকু বলবো, প্রকৃতির সে রূপে আমি মোহগ্রস্থ হয়েছিলাম।

কিন্তু তার চেয়ে বেশি মোহগ্রস্থ করার মতো কিছু যে বাহাদুর ভাইয়ের বাড়িতে অপেক্ষা করছিল তা কি আর আমি জানতাম!
রাত হয় হয়, এমন সময় পৌছুলাম বাহাদুর ভাইয়ের বাড়িতে। বাড়ির ঘাটে নৌকা ভিড়ল। আমি বাহাদুর ভাইয়ের নাম ধরে ডাকলাম। তিনি বেরিয়ে এলেন। একটা ল্যাম্প নিয়ে।

২.
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো দেরিতে। বাড়ির ঘাটে কয়েকটা নৌকা। উঠানে হৈ চৈ! কি ব্যাপার! জানালা খুলে তাকালাম উঠানে। বেশ কিছু তরুণ-যুবক উপস্থিত সেখানে। তাদের হাতে লাঠিসোঠা। কথাবার্তা শুনে যা বুঝলাম, তারা এ বাড়ির মেয়েকে নিয়ে যাবে।
বাহাদুর ভাই একা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে। বাকি সদস্যরা ঘরের দরজা দিয়ে রেখেছেন নিরাপত্তার কারণে।

বাহাদুর ভাই খুব সাহসিকতার সঙ্গে তাদের আটকাচ্ছিলেন।তার কারণে তারা ঘরের কাছে আসতে পারছিল না। কিন্তু বাহাদুর ভাইয়ের সঙ্গে শুরু হয়ে গেল ধাক্কাধাক্কি। দুটো লাঠির বাড়িও পড়লো তার গায়ে। ভেতর থেকে মেয়েদের কান্নার শব্দ ভেসে এলো তখন। একটি মেয়ে, বাহাদুর ভাইয়ের সেই বোনটি দৌড়ে এলো আমার ঘরে। আমি দেখলাম তাকে! সে আমার দিকে তার কোমল, মায়াবি, সুন্দর চোখ তুলে, পদ্ম পাপড়ির মতো ঠোঁট নেড়ে বললো, আমার ভাইকে বাঁচান। (আমি মেয়েটির নাম পরে জেনেছি “বীণা”) যেন অনেকটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি বের হলাম ঘর থেকে। গিয়ে দাঁড়ালাম বাহাদুর ভাইয়ের পাশে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম কয়েকজনকে।

একা বাহাদুর ভাইয়ের প্রতিরোধেই তারা টিকতে পারছিল না। এরপর সম্ভবত আমাকে দেখে তারা আরও দূর্বল হয়ে পড়ল মানসিকভাবে। তারা সূর একটু নরম চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল, তারা ঘন্টাখানেক পর আবার আসবে।

তারা চলে গেলে বাহাদুর ভাইয়ের কাছে জানতে পারলাম, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বখাটে সন্তানটির লোভের নজর পড়েছে তার বোনের ওপর। সে তাকে জোর করে হলেও নিজের ঘরে নিয়ে যাবে।
সেই ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে আমরা নৌকা নিয়ে প্রামের প্রায় সব মানুষের কাছে গেলাম। তাদের বললাম, বখাটেগুলোর লোভের কথা। বললাম, আজ এই ঘরের মেয়েকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, আগামীকাল আপনাদের ঘরের সুন্দরী মেয়ে দেখে তুলে নিয়ে যেতে চাইবে না তার গ্যারান্টি কি? তাদের অনুরোধ করলাম একসঙ্গে প্রতিরোধ করার।
সেদিন গ্রামবাসী এসে জড়ো হয়েছিল বাহাদুর ভাইয়ের বাড়ির উঠোনে। বাহাদুর ভাইয়ের বোনকে নিয়ে যেতে বখাটে, লোভীগুলো ঠিকই এসেছিল লাঠিসোঠা নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে মাথা নত করেছিল। নাকে খত দিয়ে, মেয়েটির দিকে আর কখনও লোভী নজরে তাকাবে না এমন ওয়াদা করে চলে গিয়েছিল।

বাহাদুর ভাই সেদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন গ্রামবাসীর কাছে।

৩.
লোভ খুব খারাপ জিনিস। সামলে রাখতে না পারলে তা ক্ষতির কারণ হয়। অশান্তির কারণ হয়। কথাটা মনে হয় আমাদের দেশে অনেক বোকা ধরনের মানুষও বোঝেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি যে, কথাটা বোঝেন না আমাদের দেশের অনেক ডিগ্রিধারী, দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন (!) কিছু মানুষ!

আর তাই নিজের লোভ চরিতার্থ করতে ওই বখাটেদের মতো পরের সম্পদের দিকে নজর দেন। কৌশলে এমনকি জোর করে তা ছিনিয়ে নিতে চান!

আরও দু:খজনক ব্যাপার, পরের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সাজোয়া বাহিনীর শক্তি ব্যাবহার করে লাঠিপেটা, এমনকি গুলিও চালায় তারা!
৪.
ছাত্র আন্দোলন চলছে! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটা অসাধারণ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন। গত তিনদিন ধরে তারা একটা অন্যায় লোভের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। গত দুদিনের অবস্থা দেখে মনে হলো, নিজেদের বাবার কষ্টার্জিত পকেটের টাকা লুট করে নিতে চাওয়া ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে তোলা সামান্য আওয়াজেই যেন শাসক শ্রেণীর প্যান্ট খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে!তাই গত দুদিনে তারা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে এমনকি গুলি চালিয়ে রাজপথ রক্তাক্ত করেছে!

তবুও থামেনি শিক্ষার্থীরা। লোভী শাসক শ্রেণীর গুণ্ডামীপূর্ণ আচরণ আর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আজ তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন তারা। সকালে আমার এক ছোটভাই ফোন করে জানালো, আজ সকাল থেকে পুলিশের সাজোয়া যানের সাইরেনের শব্দে টেকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দেশে যেন যুদ্ধ চলছে!

তার কথা শুনে বললাম, “কি আর করা, আমরা সাধারণ মানুষেরা, ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এসো ঘরের দরোজা বন্ধ করে দু’হাত তুলে পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থণা করি, কারো যেন কিছু না হয়।” এছাড়া আর কি করার আছে! আমাদের তো কোন পরমাসুন্দরী এসে মায়াবী চোখে, পদ্মপাপড়ি ঠোঁট নেড়ে অনুরোধ করছে না, “আমার ভাইদের বাঁচান”!

৫.
এখন নাকি দারুণ সভ্য সময়! একটা রাষ্ট্র মূলত জনগণের। তারাই রাষ্ট্রের মালিক। আধুনিক, সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় জনগণকে সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, জনগণকে লাঠিপেটা কিংবা গুলি করার কথা নয়। যারা সেবা দেয়ার জন্য রাজনীতি করতে এসেছেন তারা যদি সেবা দিতে না পারেন তবে সেটা তাদের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায়ভার তারা অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারেন না। জনগণের ঘাড়ে চাপাতে পারেন না। পারেন না সেই ব্যর্থতা থেকে চোখ ঘুরিয়ে দিতে অন্যের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে। কিংবা নিজেদের ব্যর্থতায় ক্ষিপ্ত হয়ে জনগণের ওপর চড়াও হতে।

একটা রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষ অস্ত্র রাখে না। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার দরকার হয়। বিধায় তারা অস্ত্র কিনে একটা বাহিনী বানিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। অস্ত্রধারীদের দায়িত্ব হয় দূর্বল, সাধারণ মানুষের সামনে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে শক্তিশালীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করা। অস্ত্রধারীদের হাতে অস্ত্র এজন্য জনগণ তুলে দেয়নি যে, তারা দূর্বল, সাধারণ মানুষের দিকে বুক রেখে দাড়িয়ে অস্ত্র তাক করে গুলি করবে। এটা সভ্যতা নয়। এটা দায়িত্ব পালন নয় সঠিকভাবে।

শিক্ষার্থীরা কেন রাস্তায় নেমেছেন? তারা কি দল বেঁধে চুরি করতে নেমেছেন? না। বরং চুরি ঠেকাচ্ছেন। তারা কি দল বেঁধে ডাকাতি করতে নেমেছেন? না। বরং ডাকাতি ঠেকাচ্ছেন। তারা কি দলবেঁধে মিথ্যাচার করতে নেমেছেন? না। বরং মিথ্যাচারের বিরোধিতা করছেন। তারা কি দলবেঁধে ছিনতাই করতে নেমেছেন? লুটপাট করতে নেমেছেন? না বরং ছিনতাই, লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাহলে তাদের ওপর লাঠিপেটা আর গুলি চালানোর মত অসভ্যতা কেন?

৬.
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আর ইতিহাসে এমন কোন নজির নেই যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কোন একক ব্যক্তির কথায় পরিচালিত হয়েছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা থাকে, আছে। আমাদেরও আছে। যার নাম সংবিধান। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের সংবিধানের কোন দরকার নেই। কোন একক ব্যক্তিই আমাদের সংবিধান, আমাদের আইন, আমাদের সব। তিনি থাকলেই যথেষ্ঠ! তাই যদি না হয় তবে একক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ আর বড় সংখ্যক মানুষের কথা গুরত্বহীন! কেন?

সংবিধানকে ধরে অন্য প্রসঙ্গ বাদ দিলাম, শিক্ষা প্রসঙ্গেই আসি… আমাদের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার হিসেবে আরও চারটি বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সবার জন্য যা সহজলভ্য ও নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, দায়বদ্ধ।

সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাকে সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে বলা হয়নি। তাহলে কোন সাহসে, কোন শক্তিতে এই প্রতিবন্ধকতা!

সংবিধানের ৭(১)-এ বলা হয়েছে “রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে হইবে”। ৭(২) এ বলা হয়েছে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে”। জনগণকে যেখানে এতখানি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ আইনে সেখানে কিভাবে কেউ সংবিধানকে তুচ্ছ করে যা ইচ্ছা তাই জনগণের ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দিতে পারে? এবং সেটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা বল প্রয়োগ করে কোন সাহসে! কিসের বলে! বল, শক্তি বা ক্ষমতা যদি জনগণ আর সংবিধান হয় তবে তাদের বল প্রয়োগের ভিত্তিটা কোথায়?

৭.
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ ও ১৭ অনুচ্ছেদকে পরোয়া না করে শিক্ষাকে আজ যেন পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। কারণ, ভ্যাট (VAT বা ভ্যালু অ্যাডেট ট্যাক্স) বা মূল্য সংযোজন কর সাধারণত যুক্ত থাকে পণ্যের সঙ্গে যা বিক্রি করা হয়। ক্রেতার কাছ থেকে এই কর আদায় করা হয়। যার আওতার মধ্যে একজন ভিক্ষুকও পড়েন। তিনি ১০০ টাকা খরচ করলে ১৫ টাকা ভ্যাট দেন।

কিন্তু শিক্ষা তো পণ্য নয়, শিক্ষায় কেন ভ্যাট দিতে হবে? সংবিধানকে তুচ্ছ করার কারণে যারা তুচ্ছ করছেন তাদের কেন শাস্তি হবে না-এই ভ্যাট বসানোর জন্য আমরা বরং এখন সে প্রশ্ন তুলতে পারি।
গতকাল প্রায় সবার মোবাইলে একটা করে সান্ত্বনা মেসেজ ঢুকেছে। যেখানে যেন সবার মাথায় হাত বুলানোর জন্য বলা হয়েছে, “ভ্যাট দেবে বিশ্ববিদ্যালয়, কোন ছাত্র নয়। কারণ, বিদ্যমান টিউশন ফির সঙ্গে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত!”

মেসেজটি পেয়ে নিজেকে যেন গাধা মনে হচ্ছিল। যেন খুব বুদ্ধিমান মানুষ আমাদের মতো গাধাকে বোঝাচ্ছেন কোন কিছু। যেন আমরা কিছুই বুঝি না। এটাও এক ধরনের ধৃষ্ঠতা। রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে অসম্মান করার ধৃষ্ঠতা!

৮.
সকালে খবর পেয়েছি, গতরাতে ছাত্র নামধারী কারা যেন এসে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে গিয়েছে একদফা। তারপর আবার এসে পুলিশ বাহিনী পিটিয়ে গিয়েছে আরেক দফা!

পুলিশ বাহিনীর ওইসব ভাইদের বলি, যারা লাঠিপেটা করতে নেমেছেন, আপনারা সংবিধানের ৩১ নং অনুচ্ছেদটি নিশ্চয় পড়েছেন। আমি ধরে নিচ্ছি মনে নেই। মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে সবাই তো আর অমন তুলনাহীন মেধাবী নয় যে সংবিধানকে পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে মনে রাখবেন! কিন্তু যেহেতু আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন, সর্বোচ্চ আইনটিতে মাঝেমধ্যে একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন। আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না তো! পারলে এখনই একবার চোখ বুলিয়ে নিন। দেখুন, সেখানে লেখা রয়েছে,“আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।” আপনাদের কাছে প্রশ্নটা তুলতে চাই, কোন আইনের রক্ষা করতে গিয়ে এবং কোন আইনের ভিত্তিতে আপনারা সংবিধানের মতো সর্বোচ্চ আইনকে তুচ্ছ করে শিক্ষার্থীদের অসম্মান করার মতো, তাদের লাঠিপেটা করার মতো সাহস দেখাতে পারেন?

কাজেই, যেই নির্দেশ দিক, রাষ্ট্রের একজন মালিক হিসেবে বলছি, সাধারণ ছাত্রদের গায়ে হাত তুলবেন না। আাইনের রক্ষক হয়ে আইন ভঙ্গ করবেন না। সংবিধান লংঘন করবেন না। শিক্ষার্থীরা যদি কোন আইন ভঙ্গ করে থাকে তবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করুন। আপনাদের কোন অধিকার নেই তাদের গায়ে হাত দেয়ার। তাদের দিকে বন্দুকের নল তাক করার। বরং আপনাদের দায়িত্ব কোন সংঘবদ্ধ দল, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের ক্যাডার নামধারী কেউ বা গুণ্ডাদল যদি তাদের ওপর হামলা করে তবে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করা, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান আপনাদের দায়িত্ব।

৯.
সরকারকে অনুরোধ করব, শিক্ষার্থীদের আরজিটা শুনুন। আপনারা টাকা চাইছেন তাদের কাছে। ১০০ টাকায় ৭.৫ টাকা। ছিনতাই করছেন না যে এভাবে জোর করে নেবেন। তারা টাকা না দিতে চাইলে এভাবে নিতে পারেন না-এটা সেবার দায়িত্বের ভেতর থেকে না ভাবলেও ভদ্রতার খাতিরে হলেও ভাবা উচিত।

সোজাভাবে তাদের বলে দিন, “বাবারা, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। তোমাদের ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলো।” এতে আপনাদের পরাজয় হবে তা নয়। বরং ছাত্রদের জয় হবে। আর ছাত্ররা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

গতকালের একটি সংবাদে দেখলাম, “আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিবির অবস্থান নিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করে”-এই লাইনটি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এদের গায়ে জামায়াত, শিবির, হেফাজত বা জঙ্গীর তকমা লাগিয়ে দেয়া হবে। অনুগ্রহ করে খেয়াল রাখবেন যেন এমনটি না হয়। একবার ভেবে দেখুন, এ শিক্ষার্থীরা কেউ আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়। এদের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়। এদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার ব্যাপারটা প্রত্যাহার করুন। এরা খুশি হবেন। এরা আপনাদের খুশি করবেন।

১০.
পরিশেষে দেশের মালিক জনগণকে বলবো, কালিহাতির সেই গ্রামের অসহায় মেয়েটিকে লোভী মানুষের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন আপনারাই। যুগে যুগে আপনারাই সকল অপশক্তিকে দূর করেছেন। সকল শুভের পক্ষে থেকেছেন। মঙ্গলের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। আপনাদের শক্তির চেয়ে বড় শক্তি কোথাও নেই, কেউ নয়। আজ যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আপনাদের সন্তান। আপনাদের ভবিষ্যৎ সন্তানদের জন্য তারা আন্দোলন করছেন। আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থ লুট যাতে না হয় সেজন্য আন্দোলন করছেন। অনেক রকম গেইম খেলা হতে পারে, বিভ্রান্ত না হয়ে তাদের সমর্থন দিন। আপনাদের হয়তো উদ্বুধ্ধ করার জন্য বীনার মতো কোন মনমোহিনী নেই, তাই উদ্বুদ্ধ নিজে থেকেই হতে হবে। দাঁড়াতে হবে বাহাদুর ভাইদের পাশে।

গতকাল একজন আমাকে বললেন, “শিক্ষার্থী …র বাচ্চারা আন্দোলন করে রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দিয়েছে! আমরা চলাচল করবো কিভাবে?” আমি তাকে বলেছি, “যানজটের এই শহরে এমনিতেই তো অনেক সময় রাস্তায় কষ্ট করেন। অনেক ইস্যুতে দিনের পর দিন রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সহ্য করেছেন। ভিআইপি গেলে তো ঘন্টাখানেক রোদের মধ্যে হাসিমুখেই ঘামেন। এখন কেন গালি দিচ্ছেন ভাই। বরং একটা ভালো কাজের দাবিতে দুটো দিন না হয় একটু বেশিই কষ্ট সহ্য করলেন”!

লেখক
আব্দুল্লাহ নুহু
সাংবাদিক
ই মেইল[email protected]

এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G