মাইকেলের বাড়িতে

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ৫:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

michael madhusudan's house jessore সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।

কবিতার এই লাইন দুটি শুলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শ্মশ্রমণ্ডিত একজন প্রত্যয়ী পুরুষের কথা। হ্যাঁ, তিনি আমাদের আধুনিক কবিতার নির্মাতা, বাংলা সহিত্যে সনেটের প্রর্ব্তক, মেঘনাদবধ কাব্যের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

 

১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ির দত্ত বাড়ির জমিদার রাজনারায়ণ দত্তের ঔরসে জন্মে ছিলেন মধুসূদন। মা জাহ্নবী দেবী। সোনার চামচ মুখে জš§ নেয়া এ মানুষের জীবন ছিল বিচিত্র। শেলী, কিটস, বায়রনের মতো বড় কবি হওয়ার অদম্য বাসনায় বন্দর থেকে বন্দরে দৌড়ে বেড়িয়েছেন। অবশেষে কপোতাক্ষের তীরে তিনি তরী ভিড়িয়েছেন।
জানুয়ারি মাসে। সাগরদাঁড়ির রাস্তাঘাট থাকে জনারণ্য। সারাদেশ থেকে ভ্রমণবিলাসী মানুষ এখানে আসেন মহাকবির জন্মভূমি দর্শন করতে।

 

আপনি হয়তোব মাইকেল সম্পর্কে অনেক কিছূই জানেন। কিন্তু আপনাকে যদি জিঞ্জাসা করা হয় আপনার কি মাইকেলে বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। যদি উত্তর হয় না তাহলে এ সংবাদটি আপনার জন্য।পল্লীকবি জসীমউদ্দীন একবার বলেছিলেন, ‘সাগরদাঁড়ির ধুলি গায়ে মেখে পুণ্য করলাম। আপনি আর বাকি থাকবেন কেন।
যেভাবে যাবেন

 প্রতাপাদিত্যের দেশ যশোর। যশোর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে সাগরদাঁড়ি। ঢাকা থেকে আপনি যশোর পর্যন্ত দু’ভাবে যেতে পারেন। আকাশপরীর ডানায় ভর করে আর স্থলপথে ডে অথবা নাইট কোচে। বিমান আপনাকে নিয়ে যাবে মাত্র ৪০ মিনিট কিংবা তারও কম সময়ে। আর বাসে যেতে হলে যাওয়া যায়, অবশ্য একটু কষ্ট স্বীকার করতে হবে। সময় নেবে ৫ ঘণ্টা। ওই তো সাগরদাঁড়ি। পথ যেন ফুরাতে না চায়, দূর থেকে দূরে সরে যায়। বাড়িটা পরে দেখা যাবে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে। তার চেয়ে চলুন কপোতাক্ষটা দেখে আসা যাক। পশ্চিমে চলে গেছে পাকা সড়ক। বাঁ হাতে কলেজ। কলেজটিকে পেছনে ফেলে সামনে কপোতাক্ষ। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কপোতাক্ষকে সামনে রেখে। কথিত আছে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর মধুসূদন একবার এখানে তার স্টিমার ভিড়িয়েছিলেন। এ যে গ্রিল দিয়ে ঘেরা ফলকটিতে খোদাই করে লেখা আছে সেই বিখ্যাত সনেট কপোতাক্ষ নদ। সেটি সুদূর ভার্সাই-এ বসে লিখেছেন কবি। সামনে একটি সুদৃশ্য ফুলের বাগান, বাঁ হাতে পার্ক। পূর্ব দিকে চলেছেন আপনি। খুব খারাপ লাগছে।

 

ক্যামেরা আনেননি। পাশে আছে স্টুডিও। ওদেরকে ডেকে নিতে পারেন আপনি। ঠিকানা দিয়ে যাবেন। বাড়ি বসে পেয়ে যাবেন আপনার স্মৃতিময় ছবিগুলো। বাঁহাতে মাইকেল মধুসূদন ইন্সটিটিউট।
মাঠ। মাঠের মাঝখানে মধুমঞ্চ। এ মাঠেই কবির জন্মদিনে সাত দিনের মেলা বসে। কয়েকদিন ধরে চলে আলোচনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মধুসূদনের বাড়ির সামনে আম তলায় গ্রিল দিয়ে ঘেরা এ মূর্তিটি মধুসূদনের। ওই তো লেখা ‘দাঁড়াও পথিকবর?…।

Main-Gate-of

আরেকটি মূর্তি আছে এখানে। এটি করেছেন শিল্পী বিমানেশ মণ্ডল। গেট দিয়ে মূল ভবনে প্রবেশ করলেন আপনি। বাঁ পাশের ঘরটিতে রয়েছে কবি পরিচিতিবিষয়ক কিছু তথ্য নির্দেশ। সামনে উঠোনের চারপাশে সুদৃশ্য সিঁড়ি দিয়ে উঠে যান পূজামণ্ডপে। বিশাল অট্টালিকা, দেব মন্দির। তখনকার দিনে অল্প সময়ের মধ্যেই সাগরদাঁড়ির দত্তেরা জীবনযাপনে জাঁকজমকের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। জানা যায়, মধুসূদনের জেঠু মহাশয় রাধামোহন দত্ত তার পুত্রের মঙ্গল কামনায় একবার ১০৮টি কালীপূজা করেছিলেন। ধন ও প্রাচুর্যে ভরা এ দত্ত পরিবারেই জš§ মাইকেল মধুসূদন দত্তের। বাঁ পাশের ঘরে রাখা হয়েছে দত্ত পরিবারের ব্যবহৃত কাঠের আসবাবপত্র। ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন কবির জন্মগৃহ। গোটা বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। বাড়িটির পশ্চিম পাশে আর একটি বাড়ি আছে। এটি কবির ভাইঝি কবি মানকুমারী বসুর, বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক মহিলা কবি। এ বাড়িটির একটি ঘরকে ব্যবহার করা হচ্ছে মধুসূদন একাডেমির অফিস ও মধুসূদন মিউজিয়াম হিসেবে। ভেতরে গিয়ে আপনি সম্পূর্ণ মধুসূদনকে দেখতে পারেন। মিউজিয়ামটির ভেতরে রয়েছে মধুসূদনবিষয়ক বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য দলিল, চিঠিপত্র, পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, হাতের আঁকা ছবি এবং অন্যান্য তথ্য নির্দেশ। এ একাডেমি ও মিউজিয়ামটি সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে পরিচালিত।Maickel৪

 

প্ররতিক্ষণ/এডি/বিএ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G