মাথা থাকবে এক দেশে, পা অন্য দেশে

প্রকাশঃ আগস্ট ২, ২০১৬ সময়ঃ ২:০৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৩১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

41

কেউ পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে, কেউবা শীতল বরফের দেশে ছোটাছুটি করছে আবার কেউবা মূহুর্তেই পৃথিবী পরিভ্রমণ করছে। অথবা এক দেশ থেকে আরেক দেশে কেউ নিমিষেই ঢুঁ মারছে।  ঘুমের মাঝে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা আমরা হর-হামেশাই শুনে থাকি। বাস্তবে যেসব জায়গায় কখনো যাওয়ার কথা ভাবেনি কেউ সেই জায়গাগুলোতেও অনায়সে বেড়ানো যায়।

কল্পনা, অথবা ঘুমের রাজ্যে সবই সম্ভব। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন,  একই রাতে যদি ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডে ঘুমাতে পারতেন তাহলে কেমন হতো? আসলেই একই মানুষ কি করে দুইটি দেশে ঘুমোতে পারে? তাও যদি হয় বাস্তবে। একটু তো চিন্তারই বিষয়। আসুন এবার জেনে নিই সেই আশ্চর্য ঘুম রহস্যের গল্পটি।

হোটেল আরবেজে একটা ঘর ভাড়া করুন। এখন একই রাতে ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডে ঘুমাবেন কীভাবে?  

আলপাইন পর্বত এলাকার ঐ সরাইখানার অবস্থান ফরাসি-সুইস সীমান্তের লা কুর শহরে। হোটেলটির কয়েকটি কক্ষের মাঝখান দিয়ে গেছে দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তরেখা। সেখানকার একেকটি বিছানায় ঘুমালে আপনার মাথা থাকবে এক দেশে, পা আরেক দেশে। মধুচন্দ্রিমা যাপনকারী যুগলদের জন্য বরাদ্দ থাকে এ রকম বিশেষ কক্ষ ও শয্যা। এ হোটেলে একটি অতিথিকক্ষ আছে, যা সম্পূর্ণ সুইজারল্যান্ডে হলেও বাথরুমটা ফ্রান্সে।

hotel-arbez-franco-suisse

গল্প নয়, সত্যিই আছে হোটেলটা। সেখানে অতিথিরা নিতে পারেন দুই সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের স্বাদ। কারণ, হোটেলের রেঁস্তোরাটিতেও দুই ভাগ: ফরাসি রসনা আর সুইস রান্নার আয়োজনে সমৃদ্ধ। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ‘দুটো দেশ একই বিছানায় ঘুমায় আর একই টেবিলে খায়’।

অভিনব এই হোটেল প্রতিষ্ঠার গল্পটাও মজার। ১৮৬০-এর দশকের শুরুতে এটির যাত্রা শুরু। এর দুই বছর পর আলপাইন এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড একটি চুক্তি সম্পাদন করে। সে অনুযায়ী সুইসরা লা কুরের কিছু অংশ পায়, আর বাকি অংশ ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই স্থানীয় ব্যবসায়ী এম পন্থুস একটি দোকান বসিয়ে দেন এমন এক জায়গায়, যা নতুন সীমান্তের ঠিক মাঝ বরাবর পড়ে যায়। সেটিই এখনকার ‘হোটেল আরবেজ’।

HI131415424

পন্থুস সময়মতোই আন্তসীমান্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। তিনি নিজ দোকানের ফরাসি অংশে পানশালা আর সুইস অংশে মুদি দোকান বসিয়েছিলেন। এটি ১৯২১ সালে কিনে নেন স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী জুল-জ্যঁ আরবেজ। তারপর নিজ নামে হোটেল ব্যবসা খুলে বসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী ফ্রান্সে হানা দেয়। কিন্তু নিরপেক্ষ দেশ বলে সুইজারল্যান্ড ছিল লড়াইয়ের বাইরে। জার্মান সেনারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই ফেরারি অনেকেও নিরাপদে হোটেলটির দোতলার অতিথি হতে পারতেন।

১০৭ মার্কিন ডলারের ভাড়ার রুম সমৃদ্ধ হোটেলটি এখন সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্স দুই দেশই শেনজেন চুক্তির আওতায় রয়েছে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আর সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের পাশাপাশি পর্যটকেরা ভিসা-পাসপোর্ট না দেখিয়েও অনায়াসে দুই দেশে যাতায়াত করতে পারেন, হোটেল আরবেজেও।

প্রতিক্ষণ/এডি/রাসিব

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G