মুরগী পালনে রাবেয়ার দিন বদল

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৪০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

rabeyaচোখে-মুখে তার আনন্দের ঝিলিক। অদম্য ইচ্ছা, শ্রম আর মেধার ফলশ্রুতিতে আজ তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। দরিদ্র পরিবারের গৃহিনী থেকে এখন তিনি সফল ক্ষুদ্র উদোক্তা। অর্জন করেছেন সরকারের ‘জয়িতা’ পদক।

নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দিনের পর দিন করে গেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। বালি পদ্ধতিতে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের গৃহিনী রাবেয়া।

রাবেয়ার দিনবদলের গল্পটা অনেক কষ্টের। স্বামীর সংসারে ঠিকমতো দু’বেলা খাবার মিলত না তার। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া। পরিবারের অনটন নাড়া দেয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামের আবুল হাশেমের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে। দিন বদলের অদম্য ইচ্ছায় পা বাড়ান সম্ভাবনাময় স্বপ্নের পথে। আর সেই পথের শেষে দেখা মেলে উদ্ভাসিত সোনালী আলোর। আজ তিনি সমাজের আর ১০ জন নারীর কাছে অনুকরণীয়।

বর্তমানে তার মালিকানায় পাকিস্তানি ফাউমি প্রজাতির দুই’শ মুরগি আর ১০ টি মোরগ। বাড়ির আঙ্গিনায় গড়া মডেল ব্রিডার থেকে প্রতিদিন ডিম পান প্রায় দেড়’শ। লালন করছেন হ্যাচারির বাচ্চা। ডিম থেকে বালু পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটিয়ে চিক বেয়ারিং ইউনিটে বড় করেন। বাচ্চার বয়স ৬ মাস হলেই এগুলো ডিম দেয় একটানা ১৪ মাস।

স্বামী কিশোরগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক। ৩ মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। বসতভিটে ছাড়া আর কিছুই ছিলনা তার। কিন্তু ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি। স্বপ্ন দেখতেন ‘কিছু একটা’ করে সংসারের হাল ধরার। সেই থেকে শুরু। একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় মুরগি পালন শুরু করেন রাবেয়া। কিন্তু এতেও ঠিক চলছিলনা সংসারের চাকা। স্থানীয় পিকেএসএফ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্রয়লার মুরগি পালন শুরু করেন। এবার ধীরে ধীরে সফলতা আসতে থাকে তার পরিকল্পনায়।

২০০৯ সালে সিলেট থেকে কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন পরিচালিত টিএমএসএস ট্রেনিং সেন্টার থেকে হ্যাচারি ট্রেনিং নেন রাবেয়া। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়িতে গড়ে তুলেন মিনি হ্যাচারি। এখানে বালু পদ্ধতিকে নিজের ব্রিডার মুরগি থেকে পাওয়া ডিমের বাচ্চা ফোঁটানো শুরু করেন। এর পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে।

এখন প্রতি মাসে তার আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এসেছে সামাজিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতিও। গত বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন রাবেয়া। একই বছর শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সিটি ফাউন্ডেশন থেকে পদক ও নগদ ৫ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি। এ টাকায় কিনেছেন অল্প জমি।

তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেঝো মেয়ে রৌশনারা ঝিনুক স্থানীয় একটি কলেজে বিএ অনার্স পড়ছেন। অপর মেয়ে কলি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে কামরুজ্জামানও এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়াশুনা শুরু করেছে। মায়ের সাফল্যে গর্বিত তারাও। রাবেয়া বেগমের স্বামী আবুল হাশেম কাজের ফাঁকে তিনি স্ত্রীর কাজে সহায়তা করেন। তিনিও মনে করেন, স্ত্রীর পরিশ্রমেই তার সংসারে সফলতা ফিরেছে।

এখন আর রাবেয়ার পরিবারে কোন অভাব নেই। এলাকার বেশ ক’জন দরিদ্র নারীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তার মুরগি ফার্ম ও হ্যাচারিতে। রাবেয়ার বাড়িতে উঠেছে নতুন ঘর। বাড়ছে খামারের পরিধি। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি বেড়েছে সামাজিক মর্যাদা। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছে আশপাশের মানুষ।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G