যেভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি (পর্ব-১)
মুনওয়ার আলম নির্ঝর
বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০০১ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি ।তারপর ক্ষমতা ছাড়ার পর আস্তে আস্তে অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে বিএনপি। তৃণমূলকে উপেক্ষিত করার কারণেই এমনটা ঘটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০০৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি কিছুটা আন্দোলন করে মাঠে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যেন পুরোই ঝিমিয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দলটি। মাঝখানে আন্দোলন করার চেষ্টা করলেও এখন একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে দলটি। অনেকেই মনে করছেন দলটির এমন নিশ্চুপ থাকা তাদের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কিন্তু বিএনপির তৃণমূল বলছে অন্য কথা তারা চায় দ্রুত চাঙ্গা হয়ে রাজনৈতিক মাঠের লড়াইয়ে ফেরত আসুক বিএনপি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মূল চালিকা শক্তি তৃণমূল আর বিএনপিতে সেই তৃণমূলই উপেক্ষিত বলে প্রতিক্ষণ ডট কমের কাছে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা।
বিএনপির বর্তমান অবস্থা নিয়ে জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিন এর বিশেষ সম্পাদক নাসিমুল গনি খান প্রতিক্ষণ ডট কমকে বলেন, বর্তমান ধারার বিএনপি দিয়ে কিছু হবে না। সময়ের প্রবাহে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে বিএনপি। চলমান দলীয় রাজনীতির প্রতি নেতাকর্মীরা দৃশ্যত নিষ্ঠাবান থাকলেও দলের পক্ষ থেকে ১৯ দফার বিষয়ে কোন চর্চা না থাকায় দিন দিন প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক বিষয়গুলো ভুলতে বসেছেন নেতাকর্মীরা।
তিনি আরো বলেন, বিগত দিনে ও বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে বিএনপির যেসব নেতাকর্মীর নামে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা হয়েছে, চেয়ারপারসনের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় আইনজীবীরা তৃণমূলের কোন নেতাকর্মীর মামলা অধিক অর্থ ছাড়া পরিচালনা করছেন না।আর এদিকে চেয়ারপারসনকে দেখানোর জন্য শুধু ভিআইপি নেতাদের মামলাগুলো পরিচালনা করছেন।
এ থেকে কিভাবে উত্তরণ হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুরের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনের মাধ্যমে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যতদিন তারা সম্মিলিতভাবে ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় মাঠে না থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হবে না। আর ঢাকা মহানগরীতে সফল না হতে পারলে সারা দেশের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দলের স্বার্থে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে।
এছাড়াও তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আহবানে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে যারা নিহত , আহত , গুলবিদ্ধ , গ্রেফতার , মিথ্যা মামলা , গুম, ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন বা সামনে আরও হবেন তাদের তালিকা তৈরি করে জোটের যে কোন একজন নেতার সমন্বয়ে সেল তৈরি করতে বলেন।
আর তিনি জোর দিয়ে বলেন, “দলকে দাড় করাতে হলে এখন একটাই উপায় সেটা হলো, ত্যাগী ও তৃনমুলকে মূল্যায়ন করতে হবে ।”
জামায়াতের সাথে থাকা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার অবিস্বরনীয় অবদান রয়েছে। শুধু মাত্র এই জামায়াতের কারণে মানুষ ভুলতে বসেছে সেই কথা। তাই বিএনপিকে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তারপরও দলের নীতিনির্ধারকরা আছেন তারা ভালো বুঝবেন কি করবেন।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহাতাব উদ্দিন জিমি প্রতিক্ষণ ডট কমকে বলেন, আমরা তৃণমূল চাই প্রকৃত নেতাদের দ্বারা কমিটিগুলো হোক। দালালদের ছাটাই করা হোক। যারা আন্দোলনে দেশের বাহিরে ছিল তাদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন নেয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, ম্যাডাম(খালেদা জিয়া) এবং তারেক ভাই ( তারেক জিয়া) থেকে সংগঠনের নেতাদের প্রতি তড়িৎ নির্দেশ দেয়া হোক যাতে ঈদের আগেই সকল দালালদের ছাটাই করা হয় দল থেকে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন ভয় পায় না। ঈদের পর দল গুছিয়ে নামতে পারলে তৃনমূল প্রস্তুত আছে।