রকেট স্টিমারে নদী ভ্রমণ

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

padel-stimer“এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার? কোথায় এমন ধুম্র পাহাড়? কোথায় এমন হড়িৎ ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে? এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে?”

প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এ রূপসী বাংলাদেশ, যার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী। আর নদীমাতৃক বাংলাদেশের অনেকেই প্যাডেল স্টিমার বা রকেটের সঙ্গে পরিচিত। প্রায় শত বছর ধরেই জনগণের সেবা দিচ্ছে এগুলো। নদী মার্তৃক বাংলার রুপ উপভোগ করতে চাইলে চেপে বসতে পারেন প্যাডেল স্টিমারে ।

একসময় ঐতিহ্যবাহী এ বাহনগুলো ঢাকা থেকে খুলনার পথে চলাচল করলেও রামপাল চ্যানেল নব্যতা হারানোর ফলে এর রুট সংকীর্ণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করছে প্যাডেল স্টিমারগুলো। মোড়েলগঞ্জের কাছেই বাগেরহাট। এ ভ্রমণে তাই বেড়িয়ে আসতে পারেন বাগেরহাট থেকেও। ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে কত কত নদী পেরিয়ে এসব স্টিমার পৌঁছায় মোড়েলগঞ্জে। দু’চোখ ভরে দেখে নেয়া যাবে বাংলার সৌন্দর্য। কোথাও জেলেদের মাছধরা, কোথাও আবার রঙিন পাল তুলে নৌকার সারি, কোথাও আবার নদীর দুপাশজুড়ে সবুজের গালিচা বিছানো বিস্তৃত ধানক্ষেত। কোথাও দেখা মিলবে নদীর বুকে সন্ধ্যা নামার মনকাড়া দৃশ্য।

ঢাকা থেকে এখন খুলনার পথে চলে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালিত জাহাজ মাসহুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা, শেলা ও টার্ন। প্রায় শতবর্ষ ধরে জাহাজগুলো সেবা দিয়ে চলছে নিয়মিত। এগুলো বয়সে বেশ প্রবীণ, ব্রিটিশদের তৈরি। এককালে স্টিমারগুলো চলত কয়লার ইঞ্জিনে, এখন চলছে ডিজেলে। ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় নোঙ্গর তুলে এ স্টিমার মধ্যরাতে ডাকাতিয়ার তীরে ব্যস্ত নৌ বন্দর চাঁদপুর ঘাট ছোঁয় সর্বপ্রথম। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, পদ্মা, আড়িয়ালখাঁর বুক চিরে এ স্টিমারের সকাল হয় কীর্তনখোলায়। আরেক ব্যস্ত নৌ বন্দর বরিশালে কিছুটা সময় থেমে আবার ভেঁপু বাজায় নলছিটির উদ্দেশ্যে।

padel-stimer1এর পরের স্টেশনটি সুগন্ধার তীরে দক্ষিণাঞ্চলের আরেক প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্র ঝালকাঠী। ঝালকাঠীর পরেই গাবখান চ্যানেল। অনেকটা খালের মতো ছোট্ট এ চ্যানেলটি পার হতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। এরপরে কাছাকাছি দূরত্বের দুটি স্টেশন কাউখালি ও পিরোজপুরের নৌ-বন্দর হুলারহাট। হুলারহাট ছেড়ে ঘণ্টাখানেক প্যাডেল মারার পরে স্টিমার এসে ঘাট ধরে চড়খালীতে। এরপরে অনেকটা সময় আর তেমন কোনো ঘাট নেই। সর্বশেষ মাছুয়া এবং মোড়েলগঞ্জ।

এখন দেশের বিভিন্ন নৌপথে অনেক আধুনিক জলযান চলছে । কিন্তু এর মধ্যেও এখনও নিজের অবস্থানকে ভালভাবেই ধরে রেখেছে সরকারি এ স্টীমারগুলো । প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণীর কেবিন ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণীর ডেক সার্ভিস আছে প্যাডেল স্টিমারে। তবে প্রথম শ্রেণীর কেবিনগুলো দোতলায়, সামনে বড় খোলা জায়গায় পুরোনো আদলে বসার আসন, ভেতরে পরিপাটি বিছানা, আছে তাপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও।

প্রতিটি কেবিনের সঙ্গেই আছে বারান্দা। আর বিশেষ পোশাকে সার্বক্ষণিক সেবাকর্মী পাওয়া যাবে দোরগোড়ায়। ঢাকা থেকে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে মাছুয়া কিংবা মোড়েলগঞ্জ পৌঁছায় পরদিন দুপুর নাগাদ। মোড়েলগঞ্জ নেমে সোজা চলে যেতে পারেন বাগেরহাটে। বাগেরহাটে বেড়াতে পারেন বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ, হযরত খানজাহান আলীর (র) কবর, খাঞ্জেলী দিঘি, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ, চামচিকা মসজিদ, সিংরা মসজিদ, বিবি বেগনী মসজিদ, রণবিজয়পুর মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদসহ আরও অনেক কিছু।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G