রাজীব মীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ বানোয়াট!
রাকিব হাসান
রাজীব মীরসহ তিন শিক্ষক মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন। তবে কমিটিতে অভিযোগকারী ছাত্রী যে মোবাইল রেকর্ড উপস্থাপন করেছে; তা তদন্ত করে দেখা যায়, সে রেকর্ড-এ যৌন হয়রানি, কু-প্রস্তাব এবং নম্বর কমিয়ে দেয়ার বিষযে কোন কথাই হয়নি। বরং চেয়ারম্যান আয়োজিত নবীন বরনে যোগ না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে রেগে গিয়ে কিছু কথা বলা হয়েছে। যেসব গণমাধ্যমে না জেনে আগ বাড়িয়ে অতি আত্নবিশ্বাসী হয়ে একজন শিক্ষকের চরিত্র হনন করেছেন এবং কোথাও কোথাও রাজীব মীরের মাথায় টুপি দেয়া ছবি প্রকাশ করে তাকে ধর্মীয়ভাবেও অপদস্ত করার চেষ্টা করেছেন তারা এখন কী বলবেন ??
সবচেয়ে অবাক লেগেছে বিবিসি এবং ইউএনবি’র রিপোর্ট দেখে। তাদের সাংবাদিকরা কিভাবে এ অন্যায্য কাজটি করতে পারলেন ?? একজন সাংবাদিক হিসেবে বলবো, কাউকে মিডিয়া ট্রায়ালে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয়। আমাদের রিপোর্টারদের আরো সংযত হওয়া প্রয়োজন; তথ্য-প্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত অতি-উৎসাহী হয়ে আবোল-তাবোল রিপোর্ট করা উচিত নয়।
তাদের জানা উচিত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীর কে নিয়ে গণমাধ্যমে যে ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তাতে সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে তিনি মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্র যাচাই না করে রিপোর্ট করে তাকে যারা হেয় করেছে রাজীব মীরের উচিত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও উচিত হবে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা নেয়া।
জবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষাথীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ ঘটনার পেছনের ভয়ংকর একটি দিক । তারা বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান এক ছাত্রীকে ফাস্ট বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ভিসি বরাবর অভিযোগ করিয়েছেন।ঐ ছাত্রী লোভে পড়ে একাজ করেছে। যদি তাই হয়ে থাকে এটাও নিশ্চয় তদন্তে বেরিয়ে আসবে। একজন শিক্ষাথীকে আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার দায়ে বিভাগের চেয়ারম্যানকেও বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।
রাজীব মীর কবি-লেখক। তাকে চিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। বিভিন্ন সময়ে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তাকে ফাঁদে ফেলে যেভাবে চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছে তা তদন্ত কমিটির বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে বেরিয়ে এলে এবং দায়ী ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফেলে ভবিষ্যতে আর কোন নিরীহ শিক্ষককে অপমান অপদস্ত করার সাহস পাবে না কেউ।
পত্রিকায় দেখেছি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীর, বর্ণনা ভৌমিক ও প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকারের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের এসব ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সেখানে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে একটি বিষয় ঘুরেফিরে এসেছে; আর ষড়যন্ত্রের পেছনে এটাই মূল কারণ বলে আমার মনে হয়। ‘‘নিয়মানুযায়ী বিভাগের পরবর্তী চেয়ারপার্সন হওয়ার কথা রয়েছে রাজীব মীরের। তার চেয়ারপার্সন পদ বানচালের জন্যই বর্তমান চেয়ারপার্সন শিক্ষাথীদের প্ররোচিত করেছেন। ইতিপূর্বে বিভাগের বর্তমান চেয়ারপারসনের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান ওই রাজীব মীর সহ ৩ শিক্ষক। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বর্তমান চেয়ারপারসন এসব পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন’।
উল্লেখ্য, বিভাগের নবীণবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে গত ১১ এপ্রিল রাজীব মীরসহ ৩ শিক্ষককে মাস্টার্সের পাঠদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ১৮ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অনৈতিক প্রস্তাব, হুমকি প্রদানসহ নানা বিষয়ে শিক্ষাথীদের কাছে ফোন রেকর্ড আছে বলে দাবি করা হয় । এমনকি কথা না শুনলে রাজীব মীরসহ অন্য দুই শিক্ষক প্রিয়াঙ্কা ও বনর্ণা শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দেবে এমন অভিযোগও রেকডে আছে বলে জানানো হয়; অথচ পরবতীতে তা ভুঁয়া প্রমাণিত হয়।
সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় হচ্ছে একটি অনলাইন রাজীব মীরের বিয়ের দিনের টুপি পরা ছবি দিয়েও তাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক তা ফলাও করে ফেসবুকে নিউজটি শেয়ারও দেন।যা একজন শিক্ষকের মর্যাদাকে শুধু ক্ষুন্ন করেনি, সমাজে তাকে অপরাধী হিসেবেও দাঁড় করিয়েছে। এটা যে কী পরিমান ক্ষতি তা শুধু ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারই উপলব্দি করতে পারবে।
রাজীব মীর দোষী প্রমাণিত হলে তাকে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসতো না। কিন্তু একজনকে নিরপরাধ মানুষকে যারা বলির পাঠা বানিয়েছে আমার বিশ্বাস তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন শিক্ষক রাজীব মীর।
রাকিব হাসান, ক্রাইম রিপোর্টার, একুশে টেলিভিশন
=======