রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হবে ঠেঙ্গারচরে
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠ্যাঙ্গার চর দ্বীপে সবধরনের সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে রোহিঙ্গাদের। মালয়েশিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ২২০০০ টন ত্রাণ নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পোঁছানোর প্রেক্ষাপটে এই তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাস উপযোগী করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগে রোহিঙ্গাদেরকে পর্যায়ক্রমে এখানে স্থানান্তর করা হবে। তবে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে কিছু দিন সময় লাগবে এবং এ বিষয়ে ওআইসির সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।
প্রায় ২৫ বছর আগে জেগে উঠা ঠেঙ্গারচরে এখন কোন জনবসতি নেই। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ১২ কিলোমিটার। বনবিভাগের তদারকিতে গত ১৫-২০ বছর ধরে সেখানে বনায়ন হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে ট্রলারে করে হাতিয়া দ্বীপে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সেখান থেকে আবার স্পিড-বোটে করে আধা ঘন্টা সময় লাগে ঠেঙ্গার চরে যেতে।
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই মুসলিম নাগরিকরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে শরণার্থী শিবিরগুলোতে রয়েছেন।সেখানে ৩০ হাজারের মতো শরণার্থী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও রয়েছেন তিন লাখের মতো। শরণার্থী শিবিরের বাইরেও রয়েছেন আরও রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ হবে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় রোহিঙ্গা আসে ৯১-৯২ সালে। ওই সময় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার ধারে প্রায় ২শত বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বনাঞ্চলে বসতি গড়েছিল রোহিঙ্গারা। পরে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির তৈরি করে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান করা হয়েছিল। ওই সময় এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ বনাঞ্চল আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেসময় মিয়ানমার থেকে সরকারি হিসাবে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে।
এরপর ৯২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়। খালি হওয়া এসব জমিতে পূনরায় বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে এসব বনাঞ্চলে চিরহরিৎ ও ঘন বৃক্ষ রয়েছে।
এদিকে প্রত্যাবাসন আটকে যাওয়া ১৩ হাজার ২৭৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ১৩১ জনে উন্নীত হয়েছে। এরা এখন উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের উদ্যোগে তাদের রেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল