লাইলাতুল মে’রাজ : করনীয় ও বর্জনীয়

প্রকাশঃ মে ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৫২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২৯ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার

merajমি‘রাজ শব্দের অর্থ উর্ধ্বগমন, উর্ধে আরোহণ, আরোহণের সিঁড়ি। যেহেতু হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর এক মহাকাশ ভ্রমণ সম্পর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাঁর এই ভ্রমণকে মি‘রাজ বলা হয়। এ ভ্রমণ যেহেতু রাতের পর রাত অব্যাহত ছিলো, সেজন্যে একে ইসরা’ও বলা হয়। কুরআনুল কারীমে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে।

মহানবীর জীবনে সংঘটিত আশ্চর্য বিষয়াবলীর মধ্যে মি‘রাজ অন্যতম। মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধুকে মক্কার মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা এবং তথা হতে উর্ধ্ব জগত পর্যন্ত স্বশরীরে, আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাদি দেখাবার জন্য ভ্রমণ করিয়ে ছিলেন। এই বিস্ময়কর ঘটনাটি পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা নাজমে উল্লেখ রয়েছে। অসংখ্য হাদীসে মি‘রাজের ঘটনা বর্ণিত আছে।

একজন মুমিনকে যেসব অদৃশ্য সত্যের প্রতি ঈমান আনতে হয়, মি‘রাজে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে তা স্বচক্ষে দেখানো হয়েছে। তবে ঠিক কোন মাস বা তারিখে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল তা কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (স.) একটি হাদীসেও মিরাজের তারিখ বর্ণনা করেননি। মিরাজের রাতের শিক্ষাগুলো ছিল তাদের কাছে মুখ্য।

মহানবী (স.) মিরাজ থেকে ফেরার সময় আল্লাহ তায়ালা তার একনিষ্ঠ ইবাদত ও আনুগত্য হিসেবে মুমিনদের মিরাজ স্বরুপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রদান করেন। আর পরবর্তী সময়ে তথা মদিনায় হিজরতের পর ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে গেলে তা পরিচালনার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন হবে, তার প্রতি নির্দেশকরত: আল্লাহ নীতিমালা পেশ করেন। সেই মৌলিক নীতিগুলোর ওপর সমষ্টিগতভাবে মানব জীবনের মূল ভিত্তি গড়ে তোলাই ইসলামের আসল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৭)।

কুরআনের সে নীতিমালাসমূহ নিম্নরূপ :

০১. এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করা। ০২. পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। ০৩. নিকট আত্মীয় ও অভাবীদের অধিকার দেয়া। ০৪. অপব্যয় থেকে বিরত থাকা। ০৫. দুস্থ-অভাবীদের সাথে সুন্দর আচরণ করা। ০৬. অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্যতা রক্ষা করা। ০৭. দারিদ্র্যতার ভয়ে সন্তান হত্যা না করা। ০৮. যেনা ব্যভিচারের নিকটেও না যাওয়া। ০৯. প্রাণ হত্যা না করা। ১০. এতিমের ধনমাল ভক্ষণ না করা। ১১. অঙ্গীকার বা আমানত পূর্ণ করা। ১২. মাপে ওজনে সঠিক দেয়া। ১৩.ভিত্তিহীন ধারণার পেছনে না পড়া। ১৪. যমিনে বাহাদুরী করে না চলা ।

হাদীস শরীফে শবে বরাত ও শবে মেরাজের নামায বলে কোন নামাযের কথা আসেনি। মিরাজের রাত্রিতে বিশেষ নফল নামায আদায়ের ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রাসূলুল্লাহ (স.) শুধু বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়তেন না। বরং বিশেষ কোন রাত্রিতে তা পড়ার জন্য তিনি কাউকে বলেননি। তবে রামাদান মাসে কিয়ামুল লাইলের কথা এসেছে দু’ভাবে। প্রথমত : সাধারণভাবে রামাদানে কিয়ামুল লাইলের কথা এসেছে। দ্বিতীয়ত: লাইলাতুল কাদরে কিয়ামুল লাইলের কথা এসেছে। কিন্তু অন্য কোন বিশেষ রাত্রির বিশেষ কিয়ামের কথা কোন হাদীসে আসেনি। এমনকি কদরের রাতে যে কিয়ামের কথা বলা হয়েছে তার নামও কিন্তু কদরের রাতের নামায নয়। আর শবে মিরাজ ও শবে বরাতের নামাযের কথা তো বলাই বাহুল্য।

আমাদের দেশের কোন কোন এলাকার মসজিদে এই দুই রাত্রিতে জামা‘তের সাথে ১২ রাক‘আত নামায আদায় করা হয় এবং এই নামায শেষে আবার রামাদানের মত বিতরের নামাযকেও জামা‘আতের সাথে আদায় করা হয়। রজব মাসের কোনো রাতের বিশেষ ফজিলতের কোনো বর্ণনা বা মেরাজের রাতের ফজিলত সম্পর্কে যে ক’টি হাদীস আমাদের সমাজে চালু আছে তার প্রায় সবগুলোই মুহাদ্দিসগণের বিচারে জাল ও বানোয়াট।

কোন ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য নয় বরং নানা বিভ্রান্তি দূর করাই লেখার স্বার্থকতা। ইবাদতের ক্ষেত্রে আবেগ দিয়ে কোন বিষয় লেখা ঠিক নয়। তাই সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে আমল করা সকল মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে কুরআন-হাদীস বোঝার তাওফীক দান করুন।

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G