লিভারে চর্বি জমেছে?
ফ্যাটি লিভার বা চর্বিযুক্ত যকৃৎকে এখন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। লিভার সিরোসিসের একটি অন্যতম কারণ ফ্যাটি লিভার। তবে জীবনযাপন এবং খাওয়াদাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে এই রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ফ্যাটি লিভার বিষয়টি কী? এখানে কি লিভারের মধ্যে চর্বি জমে যায়?
ফ্যাটি লিভার মানে লিভারে চর্বি জমে যাওয়া। সাধারণত আমাদের লিভারে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত চর্বি জমা থাকে। যদি পাঁচ শতাংশের বেশি চর্বি জমা হয়, তবে আমরা এটাকে ফ্যাটি লিভার বলে থাকি।
এই সমস্যা হয় কেন?
ফ্যাটি লিভার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে খাদ্যাভাস। ফাস্ট ফুড, গরুর মাংস, খাসির মাংস-এসব খাওয়াদাওয়া যারা বেশি করে, তারা সাধারণত ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়। আরো কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। যেমন : ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোন এসব কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, অ্যালকোহল সেবন।
মূলত চর্বি আক্রান্ত লিভারকে দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। একটি হচ্ছে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ, আরেকটি হচ্ছে নন অ্যালকোহলিক স্টেটো হেপাটাইটিস। অর্থাৎ ফ্যাটি লিভার হওয়ার পর যদি হেপাটাইটিস হয়ে থাকে, লিভার এনজাইমগুলো যদি বেশি থাকে তখন আমরা তাকে বলি ন্যাশ অথবা নন অ্যালকোহলিক স্টেটো হেপাটাইটিস। আর যদি হেপাটাইটিস না থাকে, তখন বলি নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ।
এ সমস্যায় কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায়?
দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়ে গেছে। যদি কখনো আল্ট্রাসনোগ্রামে বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন রোগীরা লিভারের চিকিৎসকের কাছে আসেন। আগে আমরা ফ্যাটি লিভারকে তেমন গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এখন ফ্যাটি লিভারকে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
আননোন বা অজানা লিভার সিরোসিস যেটাকে নন বি, নন সি লিভার সিরোসিস বলি সেটার পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্যাটি লিভার দায়ী। লিভারের মধ্যে চর্বি জমা হচ্ছে এবং লিভার ক্ষত হয়ে সিরোসিস হয়ে যাচ্ছে। তাই লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। যদি কারো প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে, তাহলে তখনই চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসক যেই চিকিৎসাপত্র দেবেন তা মেনে চলতে হবে। কেননা এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে পরে সিরোসিস হতে পারে এবং ক্যানসার হতে পারে। তখন তো সিরোসিসের লক্ষণই দেখা দেবে। এর আগে কি ফ্যাটি লিভারের কারণে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাবে?
নন অ্যালকোহলিক স্ট্যাটো হেপাটাইটিসে অর্থাৎ যদি লিভার থেকে এনজাইম বেড়ে যায় তখন কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যেমন : খেতে পারছে না, বমি বমি ভাব হচ্ছে ইত্যাদি।
চিকিৎসার জন্য কী করে থাকেন?
প্রথমে কারণ নির্ণয় করি। নির্দিষ্ট কোনো কারণে সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখি। সেই ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েড হরমোনের যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেগুলোর চিকিৎসা দিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জীবন-যাপনের পরিবর্তন। যদি রোগী অ্যালকোহলিক হয়ে থাকে তবে অ্যালকোহল অবশ্যই বাদ দিতে হবে। ফাস্ট ফুড বা ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। দৈনিক এক ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে। মাছ, মাংস, ডিমের কুসুম খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে। সাধারণত ওজন যাদের বেশি থাকে, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। তাই তাদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় ওজন কমাতে।
তবে ফ্যাটি লিভারের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। মূলত লক্ষণ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকি। যদি ফ্যাটি লিভার থেকে সিরোসিস হয় এবং এটি থেকে যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে শেষ পর্যন্ত রোগীকে কিন্তু মৃত্যুর দিকেই যেতে হবে।
অনেকে অসচেতনতার কারণে দেরি করে চিকিৎসকের কাছে যান। সে ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের কারণে সিরোসিস হওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে কেমন?
নন বি, নন সি ভাইরাস থেকে যে লিভার সিরোসিসটা হচ্ছে সেটি কিন্তু দিন দিন আরো বাড়ছে। আমি একটা বিষয় বারবার বলছি সেটা হলো ফ্যাটি লিভারকে আমরা একটা সময় গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এখন লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ হিসেবে ফ্যাটি লিভারকে ধরা হয়। আবারও বলছি ফ্যাটি লিভারের সমস্যা যদি কারো থাকে তবে অবশ্যই লিভার বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে এর চিকিৎসা করাতে হবে।
প্রশ্ন : ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের জীবনযাপনে কী নিয়ম মানতে হবে?
উত্তর : আল্ট্রাসনোগ্রামে যদি কখনো দেখা যায় অস্বাভাবিকতা আছে বা লিভারে কোনো সমস্যা আছে, তাহলে দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আর ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত না হতে চাইলে খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। গরুর মাংস, মাছ, ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলবেন বা পরিমিত খাবেন। যদি ওজন বেশি হয়ে থাকে, তাহেল এক থেকে দুই ঘণ্টা করে হাঁটবেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে বা হরমোনজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস বা হরমোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্ট করবেন।
সূত্র: এনটিভিবিডি
ইউনাইটেট হাসপাতালের লিভার বিভাগের পরামর্শক
ডা. ফাওয়াজ হোসাইন শুভ।
=========