শীর্ষে দুর্নীতির দশ দেশ

প্রকাশঃ জুলাই ১, ২০১৫ সময়ঃ ২:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০৫ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

1026-SOMALIA-CORRUPTIONঅর্থনীতি ও দুর্নীতির পাশাপাশি হাত ধরে চলে। উন্নত বিশ্বের প্রচার মাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করে বিধায়, দুর্নীতির তথ্য প্রচার করতে তাদের কোন সমস্যা হয় না। তাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য বিশ্বে অর্থনৈতিক দুর্নীতি পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

পাশ্চাত্য বিশ্বের মত উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলোর প্রচার মাধ্যম এতটা স্বাধীনতা ভোগ না করার কারণে এসব দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনগণের উপর শোষণ, নির্যাতন করে থাকে। দরিদ্র্য দেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতি হয়ে থাকে প্রবল শক্তিধর। এর ফলে ভেঙ্গে পড়ে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দারিদ্র্য দূরীকরণের যে নীতি ও পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা কার্যকরী হয় না।

উন্নয়নশীল বিশ্বে দুর্নীতি ছাড়া অর্থনীতি এক পা অগ্রসর হতে পারে না। সরকারের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দুর্নীতির আকন্ঠে নিমোজিত থাকে। উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আর্থ-সামাজিক দুর্নীতিতে রাজনীতিবীদগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন।

বহু সরকার দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, এদের শিকড় গভীরে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ দুর্নীতি বহন করে বেড়াতে হয় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। ইচ্ছা করলেও তারা দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারে না। জার্মানীর বার্লিন ভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতি সম্পর্কে নানান তথ্য উপস্থাপন করেছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বে সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। কারণ, এ সব দেশের মানুষ নিজের অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না। আর সে কারণেই সরকার ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি অবাধে চলতে থাকে। কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শেষ করতে বছরের পর বছর পার করে দেয়। এতে অর্থের অপচয় ঘটে। টাকার ভাগ বাটোয়ারায় জড়িয়ে পড়েন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সামরিক কর্মকর্তারা পর্যন্ত।

টিআই-য়ের গবেষণা, পর্যবেক্ষণে শীর্ষ দশটি দুর্নীতির দেশ :

উত্তর কোরিয়া ও সোমালিয়া : দুর্নীতিতে এ দু’টি দেশ যৌথভাবে আট পয়েন্ট অর্জন করে শীর্ষস্থান দখল করেছে। প্রথমেই উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গে আসা যাক। সামরিকখাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে দেশটি। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় এ দর্শনে বিশ্বাসী দেশটির নেতৃবৃন্দ।

সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ার মাথা পিছু আয় ১ হাজার ৮০০ ডলার। সামরিকখাতে ব্যয় জাতীয় আয়ের শতকরা ৩৫ ভাগ। সামরিক জান্তারা আরাম আয়েশে দিন কাটান। তাদের জন্য অঢেল অর্থ ব্যয় করা হয়। সাধারণ মানুষের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে দেশটিতে প্রচন্ড খাদ্য সংকট। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের সেদিকে কোন দৃষ্টি নেই।

ব্যবসা বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি। এ দুর্ণিতির সঙ্গে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব দুর্নীতির কথা সাধারণ মানুষ জানতেই পারেন না।  আর জানলেও তাদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই।

সোমালিয়া সম্ভবত এ পৃথিবীর সবচেয়ে রাজনৈতিক অস্থীতিশীল দেশ । এ দেশের অধিকাংশ নাগরিক কৃষি কাজে জড়িত। কোন মতে খেয়ে পরে তাদের দিন কাটে। দেশটির অর্থনীতির সার্বিক দায় দায়িত্ব পালন করে সরকার। বিদেশী বিনিয়োগ বলে কিছুই নেই। প্রশাসনের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সবাই কম বেশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। অদূর ভবিষ্যতেও সেখান থেকে দুর্নীতি দূর হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সুদান : দুর্নীতিতে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুদান। জাতিগোষ্ঠীর দ্বন্ধ, সংঘাত, রক্তপাত, হানাহানি- এই হচ্ছে গত এক দশক ধরে সুদানের স্বাভাবিক চিত্র। ভাবতে অবাক লাগে তেল সমৃদ্ধ দেশটির মানুষ ভয়াবহ নির্মমতার শিকার।

দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। এর মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ। মোট জিডিপি ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৮৫ ডলার। সুদানে প্রতিটিস্তরে দুর্নীতি বিদ্যমান। দুর্নীতির বিচার হয় না বললেই চলে।

আফগানিস্তান : ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের প্রবল ক্ষমতা, রাজনৈতিক সংঘাত, অস্থীতিশীলতা,জাতিগত সংঘাত, তালেবানদের ক্ষমতায়ন, ওসামা বিন লাদেনের আদর্শে বিশ্বাসী আল কায়েদা, এই হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে  আফগানিস্তান  সম্পর্কে  প্রাথমিক ধারণা।

টিআইয়ের প্রতিবেদনে দুর্নীতিতে আফগানিস্তানের পয়েন্ট ১২। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের এ দেশটিতে নারীদের শিক্ষা দীক্ষা এক প্রকার হারাম। পুরো দেশটি বহু আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলে বিভক্ত। রক্তপাত, হানাহানি স্বাভাবিক ঘটনা।

দক্ষিণ সুদান : দুর্নীতিতে দক্ষিণ সুদান পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তাদের ঝুলিতে ১৫ পয়েন্ট। ২০১১ সালে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হয়েছে। গত বিশ বছরে জাতিগত সংঘাতে দেশটির প্রায় ২৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।
দক্ষিণ সুদানের আয়ের উৎস হচ্ছে অপরিশোধিত তেল। এই তেল সমৃদ্ধ দেশটি দুর্ভিক্ষের শিকার। অধিকাংশ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার জোটাতে পারেন না। শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ দারিদ্যসীমার নীচে বসবাস করেন। শতকরা ৫ ভাগ লোক রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

ইরাক : দুর্নীতিতে ইরাকের স্থান ৬ষ্ঠ। সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুর পর আজ অবধি দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজমান। অনেক বিশেষজ্ঞ এটা ভেবে অবাক হয়েছেন যে, দুর্নীতিতে ইরাক কেন শীর্ষ স্থান অর্জন করেনি? বর্তমানে দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অলিখিত শাসন চলছে। এত কিছুর পরও দেশটিতে দুর্নীতির কমতি নেই। দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতি বিরাজমান। শীর্ষ কর্মকর্তারা কম বেশি আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

তুর্কমেনিস্তান : দুর্নীতিতে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে তুর্কমেনিস্তান। মধ্য এশিয়ার এ দেশটিতে নানা রকম দুর্নীতি ও অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে।
দেশটির আয়তন প্রায় ৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা মাত্র ৫২ লাখ। ১৯২৪ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে ছিল দেশটি। ৬৭ বছর পর স্বাধীনতা লাভ করে। এরকম সুন্দর একটি দেশের রাজনীতিবীদ, সরকারী কর্মকর্তা, প্রশাসনের সবাই কম বেশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

উজবেকিস্তান : ২০১৩ সালে উজবেকিস্তানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল শতকরা ৮ ভাগ। পাঁচ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৪৬ ডলার। মধ্যম আয়ের দেশ উজবেকিস্তান।
দেশের জনগণের সুন্দর জীবন কাটানোর কথা। আর সেটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু রাজনীতিবীদদের লোভ-লালসা, আর আর্থিক কেলেংকারীর দুর্নীতিতে ছেঁয়ে গেছে দেশটি। টিআই-য়ের প্রতিবেদনে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দুর্নীতিতে অষ্টম স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান।

লিবিয়া : বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক সংঘাত, দ্বন্ধ, রক্তপাত হানাহানি চলছে লিবিয়াতে। মোহাম্মদ গাদ্দাফির মৃত্যর পর রাজনৈতিক সংঘাত প্রবল আকার ধারণ করেছে। দেশটির আয়ের উৎস হচ্ছে অপরিশোধিত তেল। শতকরা ৯৫ ভাগ অর্থ আসে তেল রফতানি করে। রাজনৈতিক সংঘাত আর বিরোধের কারনে অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। দু’দশকে বেকারত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১০ ভাগ। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দুর্নীতিতে নবম স্থানে রয়েছে লিবিয়া।

ইরিত্রিয়া : পশ্চিমে সুদান. দক্ষিণে ইথিওপিয়া, এবং দক্ষিণ পূর্বে জিবুতি। এর মাঝে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশ ইরিত্রিয়া। ১৯৯৩ সালে ২৪ মে ইথিওপিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ইরিত্রিয়া। মাত্র ৬০ লক্ষ লোকের বাস। মাথাপিছু জাতীয় আয় মাত্র ৫৯০ ডলার।

কঠিন সংগ্রাম করেই দেশের মানুষ জীবন নির্বাহ করে। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কোন মতে বেঁচে আছে। তাদের কোন সম্পদ নেই। শতকরা ৫ ভাগ মানুষ সকল প্রকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। টিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুর্নীতিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইরিত্রিয়া দশম স্থানে রয়েছে।

সূত্র: টিআই

প্রতিক্ষণ/এডি/ফাহিম

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G