যতক্ষণ তুমি কৃষকের পাশে আছো,
যতক্ষণ তুমি শ্রমিকের পাশে আছো,
আমি আছি তোমার পাশেই।
যতক্ষণ তুমি মানুষের শ্রমে শ্রদ্ধাশীল
যতক্ষণ তুমি পাহাড়ী নদীর মতো খরস্রোতা
যতক্ষণ তুমি পলিমৃত্তিকার মতো শস্যময়
ততক্ষণ আমিও তোমার।
এই যে কৃষক বৃষ্টিজলে ভিজে করছে রচনা
সবুজ শস্যের এক শিল্পময় মাঠ,
এই যে কৃষক বধূ তার নিপুণ আঙুলে
ক্ষিপ্র দ্রুততায় ভেজা পাট থেকে পৃথক করছে আঁশ;
এই যে রাখাল শিশু খররৌদ্রে আলে বসে
সাজাচ্ছে তামাক আর বারবার নিভে যাচ্ছে
তার খড়ে বোনা বেণীর আগুন,
তুমি সেই জীবন শিল্পের কথা লেখো।
তুমি সেই বৃষ্টিভেজা কৃষকের বেদনার কথা বলো।
তুমি সেই রাখালের খড়ের বেণীতে
বিদ্রোহের অগ্নি জ্বেলে দাও।
আমি তোমার বিজয়গাঁথা করবো রচনা প্রতিদিন।
সেই শিশু শ্রমিকের কথা তুমি বলো, যে তার
দেহের চেয়ে বেশী ওজনের মোট বয়ে নিয়ে যায়,
ব্রাশ করে জুতো, চালায় হাঁপর, আর বর্ণমালাগুলো
শেখার আগেই যে শেখে ফিল্মের গান,
বিড়ি টানে বেধড়ক। তারপর একদিন ফুঁটো ফুসফুসে
ঝরিয়ে রক্তের কণা টানে যবনিকা জীবনের।
তুমি সেই শিশু শ্রমিকের বেদনার কথা বলো।
আমি তোমার কবিতাগুলো গাইবো নৃত্যের তালে তালে
বুদ্ধিজীবীদের শুভ্র সমাবেশে। তুমি উদ্বৃত্ত মূল্যের সেই
গোপন রহস্য বলে দাও, আমি তোমার পেছনে আছি।
যতক্ষণ তুমি সোনালী ধানের মতো সত্য,
যতক্ষণ তুমি চায়ের পাতার মতো ঘ্রাণময়,
যতক্ষণ তুমি দৃঢ়পেশী শ্রমিকের মতো প্রতিবাদী,
যতক্ষণ তুমি মৃত্তিকার কাছে কৃষকের মতো নতমুখ,
ততক্ষণ আমিও তোমার।
তৃমি রুদ্র কালবোশেখীর মতো নেমে আসো
নগরীর এই পাপমগ্ন প্রাসাদগুলোর বুকে
বজ্র হয়ে ভেঙ্গে পড়ুক তোমার নতুন কাব্যের ছন্দ
শিরস্ত্রাণপরা শোষকের মাথার উপরে।
আমি তোমার বিজয় বার্তা করবো ঘোষণা জনপদে।
তুমি চূর্ণ করো অতি-বুদ্ধিজীবীদের সেই ব্যূহ,
কৃত্রিম দর্শন আর মেকি শিল্পর প্রলেপে
যো আছে আড়াল করে সত্য আর সুন্দরের মুখ।
আমি তোমার পেছন আছি । তুমি খুলে দাও সেই
নব জীবনের দ্বার, পরশনে যার পৃথিবীর অধিকার
ফিরে পায় প্রলেতারিয়েত।
আমি এই বীরভোগ্যা বসুন্ধরা দেবো তোমাকেই।
=========