সংখ্যালঘুর বাড়িতে ছাত্রলীগের হামলা
জেলা প্রতিবেদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে একটি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মেয়ের জামাতার অপরাধের কারণে এ হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদেরকে মারধর করে এবং সকালের আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর ঝর্ণা চক্রবর্তী নামে বৃদ্ধা তার ছেলে জয় চক্রবর্তীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু, ঝর্ণা পালিয়ে বাচঁলেও আতঙ্কে অন্য বাসিন্দারা। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের।
সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা বিশ্বরঞ্জন সেন চরকা কুটির শিল্পের শ্রমিকদের আবাস কলোনীতে এ ঘটনা ঘটে।
এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি ছাত্রলীগ, সংখ্যালঘু পরিবারটিকে ভারতে পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জানাগেছে, জেলা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা কয়েক’শ কর্মী সমর্থক নিয়ে ঢুকেন ঝর্ণার কুটিরে। শুরু হয় তাণ্ডব। টেনেহিচড়ে ঝর্ণা আর তার ছেলে জয় চক্রবর্তীকে ঘর থেকে বের করে এনে মারধর শুরু করেন। আর অন্যরা বাড়ির ভেতর ও বাইরে ভাংচুর চালান।
এসময় ছাত্রলীগের ওই শীর্ষ নেতা ঝর্ণাকে বলেন, সকালের সূর্য উঠার আগেই তাদের এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর মেয়ের জামাতা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ভারতের শিলং এর এক্সপোর্ট ম্যানেজার শ্যামল চৌধুরীর বাড়ি চিনিয়ে দেয়ার জন্যে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ঝর্ণা আর জয়কে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের কাজীপাড়ায়। সেখানে গিয়ে শ্যামলের ভাড়াটে বাড়ির (প্রদিপ্ত ভিলা) মালিককে হুমকি দেয়া হয় বাড়ি থেকে শ্যামলের পরিবারকে বের করে দেয়ার। তা না হলে এই বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হবে।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের বক্তব্য জানতে চেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, শ্যামল সবসময় মাতাল থাকেন। কারাগার থেকে বের হয়ে আসলে তাকে যেন আশ্রয় না দেওয়া হয় সে বিষয়টিই তার শাশুড়িকে জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর (রোববার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামল জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে ফোন করে যাচ্ছে তাই গালাগালি করেন। এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পরই পুলিশ শহরের পূর্ব মেড্ডায় বিশ্ব রঞ্জন সেন চরকা কুটির শিল্পের শ্রমিকদের বসবাসের একটি ঘর থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে আসে। বেদম পিটিয়ে তাকে একটি ডাকাতি ও আরেকটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে পরদিন আদালতে পাঠিয়ে দেয়। এরবাইরে হুমকি দেয়ার একটি অভিযোগও দেয়া হয় থানায়।
শ্যামলের স্ত্রী তপতী রায় চৌধুরী জানান, তার স্বামী মাতাল হয়ে ১৮ অক্টোবর রাত বাসায় আসে। এদিন তিনি ছিলেন মেড্ডায় তার মায়ের বাসায়। রাত পৌনে একটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে ১৫/১৬ জন পুলিশের একটি দল তাদের বাসায় আসে। তারা শ্যামল আছে কিনা জানতে চায়। ঘরের দরজা খোলার পরই ঘুমন্ত শ্যামলের ওপর হামলে পড়ে পুলিশ সদস্যরা। মারধর করতে শুরু করে সমানে। আমি তখন তাদের কাছে জানতে চাই কি অন্যায় করেছে সে, তাকে মারছেন কেন বলার পর একজন পুলিশ আমাকেও মারতে তেড়ে আসে। তখন তারা আমাকে জানায়, সে একজনকে (প্রভাবশালী) মারার হুমকি দিয়েছে।
তপতি আরো জানান, ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ভয়ে তারা এখন এবাড়ি-ওবাড়ি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পূজা উৎসবে আনন্দের বদলে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি’র এক কালোমেঘ নেমে এসেছে তাদের জীবনে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শ্যামলের বিরুদ্ধে মোবাইলে একজনকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া সে একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামি। গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর শহরের দাতিয়ারায় সংগঠিত একটি ডাকাতির মামলার এবং শহরতলীর নাটাইয়ের একটি হত্যা মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আদালতে প্রেরণ করা হয় শ্যামলকে।
তবে শ্যামলের স্ত্রী তপতী চক্রবর্তী জানান, তার স্বামী গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে