সরকার ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে: খালেদা

প্রকাশঃ মে ১৩, ২০১৭ সময়ঃ ৯:০২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৫ অপরাহ্ণ

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

আজ শনিবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ‘পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা’ শিরোনামে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

বেগম জিয়া বলেন, শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করছে। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। বিরোধীমতের লোকজনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আত্মতুষ্টির কারণে পাসের হার বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।

তিনি বলেন, আমি নিজে শিক্ষাবিদ নই, কিন্তু বিভিন্ন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। এমন পরিবর্তন প্রয়োজন যা দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে, শিক্ষার সুফল সব মানুষের জীবনে পৌঁছাবে। শিক্ষা হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের পরিচিতি ও মাধ্যম। শুধু সীমিত লোকের অর্থ বা বিত্ত দিয়ে আমরা এই পরিচিতি অর্জন করতে পারব না।

খালেদা বলেন, শিক্ষার সব উদ্দেশ্য আজ ভুলুণ্ঠিত। সুশাসন, আইনের শাসন আজ নেই বললেই চলে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সব বিরোধীমতকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব, প্রতিষ্ঠা করব মানুষের অধিকার। আমরা জানি এ লড়াই কঠিন লড়াই। কিন্তু যে জাতি লড়াই করে স্বাধীন হয়েছে, তাদের কাছে এ লড়াই কোনো কঠিন লড়াই নয়। একজন মানুষের পরিপূর্ণ জীবন লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা থাকলেই মানুষ সব দুর্যোগ, দুর্ভোগের মোকাবিলা করতে পারে। আপনারা একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব ক্ষেত্রে লেখাপড়া জানা মানুষের চেয়ে লেখাপড়া না জানা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহত মানুষের সংখ্যা বেশি।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যবস্থার লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতার সঙ্গে সমাজে বিরাজমান যে শ্রেণি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে তা সম্পর্কিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, সমাজ যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য নিজেই অর্থের সংস্থান করে, সমাজের সুবিধাভোগীরা সেখানে ভিন্ন ধরনের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রচলিত সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। কারণ, সব শিক্ষার মধ্যেই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা আছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বিএনপির নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। যেভাবে দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে। এ কারণেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া তাঁর ১৯-দফা কর্মসূচিতে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার কথা বলেছিলেন।’

এর আগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ৪টি অধিবেশনে যারা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন তাদেরকে ক্রেস্ট প্রদান করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় দলের কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা, ২০ দলীয় জোটের নেতা ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G