সাত খুনের মামলায় রানা নির্দোষ!
জেলা প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) এম এম রানা তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করেছেন মাত্র, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। এমনটাই দাবি করেছে এম এম রানার পরিবার।
আজ শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এভাবেই নিজের স্বামীকে নির্দোষ দাবি করেন এম এম রানার স্ত্রী নূর এ হাফজা। সংবাদ সম্মেলনে রানার মা কোহিনূর বেগম, বাবা জামাল হোসেন এবং তাঁর মেয়েশিশু মারিহা আল-দ্বীন ও আইনজীবী ফরহাদ আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
নূর এ হাফজা তার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, মর্মান্তিক হত্যার দীর্ঘ এক বছর পর তদন্ত কর্মকর্তা কোনোরূপ সাক্ষ্য-প্রমাণ-সমর্থন ব্যতীত, এমনকি সুশৃঙ্খল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের চেইন অব কমান্ড এবং অফিশিয়াল অর্ডারের মূল্যায়ন না করেই এম এম রানাকে এ মামলায় প্রাথমিক তদন্তে অপহরণসহ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এম এম রানা কোথাও নিজেকে জড়িয়ে অপহরণ ও হত্যার সহায়তার দোষ স্বীকার করেননি।’
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা করেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১-এর চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, কমান্ডার এম এম রানাসহ ১৯ র্যাব সদস্যের মধ্যে ১৮ জন সাত খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানা, কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
সাত খুন মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এ ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে গেলে সেখানকার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশ সরকার এখনো তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে এম এম রানার স্ত্রী দাবি করেন, ‘র্যাব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এ বাহিনীকে চেইন অব কমান্ড অনুসারে কাজ করতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গ্রেপ্তারের মতো বৈধ আদেশ অধঃস্তন কর্মকর্তার অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের আদেশটি অধিনায়ক তারেক সাঈদ কোম্পানি কমান্ডারদের সম্মেলনে অফিসার হিসেবে মেজর আরিফকে দায়িত্ব দেন। কারণ কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার অধিবাসী, যা মেজর আরিফের টেরিটোরিয়াল জুরিসডিকশনের অন্তর্ভুক্ত।’
অপহরণের ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে নূর এ হাফজা বলেন, ‘ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত রানা চাষাঢ়া সংলগ্ন আর্মি মার্কেটের সামনে নিজস্ব অপারেশন পরিচালনা করছিলেন। তার পরে মেজর আরিফকে সিওএর নির্দেশে অপারেশনে গ্রেপ্তারের সহায়তার জন্য যোগ দেন। রানা এই বৈধ গ্রেপ্তারের সহায়তার আদেশ অমান্য করলে সার্ভিস রুল অনুযায়ী তাঁর কোর্ট মার্শাল বা বড় ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো।’
রানার স্ত্রী দাবি করেন, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি র্যাবের যথাযথ নিয়ম অনুসারে প্রকাশ্য দিবালোকে লোকচক্ষুর সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সিটি করপোরেশনের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে সম্পন্ন করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ গ্রেপ্তারের আদেশের ধারাবাহিকতায় এম এম রানা শুধু গ্রেপ্তারে সহায়তা করেন। অপারেশন অফিসার মেজর আরিফ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে তাঁর কাস্টডিতে নিয়ে পরবর্তী সময়ে আইনি পদক্ষেপের জন্য স্থান ত্যাগ করেন। এম এম রানা পরবর্তী সময়ে অধিনায়কের কার্যালয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারের সহায়তার রিপোর্ট করেন।’
‘এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই র্যাব ১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ এবং মেজর আরিফকে র্যাব সদর দপ্তরে তলব করে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু রানাকে সদর দপ্তরে তলবও করেনি বা কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদও করেননি। এমনকি তাঁকে কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে, যা বাংলাদেশ সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার ও নৌবাহিনী আইনের পরিপন্থী।’
এম এম রানার স্ত্রী আরো বলেন, রানা যখন সাতজনকে ধরতে অধিনায়ক তারেক সাঈদের নির্দেশে অপারেশন অফিসার হিসেবে মেজর আরিফকে সহযোগিতা করেন, তখন কিন্তু বিষয়টি অপহরণ ছিল না।’ এ ব্যাপারে তিনি ন্যায়বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/তাফসির