সালমান শাহ হত্যার তদন্তে র্যাব
আদালত প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম
জনপ্রিয় চলচিত্র নায়ক চৌধুরী মোহাম্মাদ ইমন ওরফে সালমান শাহ (২৫) হত্যা মামলা র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) তদন্তেদর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ আদেশ দেন।
মামলার বাদী সালমানশাহর মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীর নারাজী গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।
মঙ্গলবারই বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহফুজ মিয়া নারাজী দাখিল করে তার ওপর শুনানি করেন। ওই আইনজীবী জানান, আগামী ১২ এপ্রিল র্যাবকে তদন্ত প্রদিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রায় ১৫ বছর ধরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে সিএমএম আদালত সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীসহ ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
গত ২১ ডিসেম্বর নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরী আদালতে হাজির হয়ে নারাজী দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন। ওইদিন আদালত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের ১১/বি নিউস্কাটন রোর্ডের স্কাটন প্লাজার বাসান নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিংসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে সালমান শাহের পিতা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। সে মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ এবং পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়নাতদন্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে তারা সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যাজনিত বলে উল্লেখ করেন। পরে সালমান শাহর পরিবার ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিলে সালমানের লাশ কবর থেকে তুলে ফের ময়না তদন্ত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদনে বলা হয় লাশ অত্যধিক পচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আত্মহত্যাজনিত বলে সালমান শাহর মৃত্যু হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিদেনের বিরুদ্ধে বাদী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নারাজী দেন। নারাজিতে তিনি সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, জনৈক আবুল হোসেন খান, বাসার কাজের মেয়ে ডলি, মনেয়ারা বেগম, সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল খালেক, সামিরার আত্মীয় রুবি, এফডিসির সহকারী নিত্য পরিচালক নজরুল শেখ ও ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে উল্লেখ করেন।
নারাজীর পর আদালত ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমানের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। এ তদন্ত কর্মকর্তাও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সালমানের বাবার ডিওএইচএস (জোয়ার সাহারা) এর বাসায় রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের এক যুবকের যায়। মিথ্যা পরিচয়ে সালমান শাহের বাবার বাসায় ঢোকার অভিযোগে তাকে কেন্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে একটি মামলা করা হয়।
ওই মামলায় রেজভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে সালমান শাহ হত্যার কথা স্বীকার করে তার সহযোগী হিসেবে ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মাদ ভাই, সাত্তার, সাজু, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি ও জনৈক রুবির নাম প্রকাশ করে। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ জুলাই আদালতের তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।
এরপর বাদী সালমানের বাবা কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন। এরপর আদালত ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অপমৃত্যুর মামলা এবং ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলা একত্রে তদন্তের জন্য সিআইডির ওপর তদন্তভার হস্তান্তর করেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান প্রায় সাড়ে ৩ মাস তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ২ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেতন দাখিল করেন।
উক্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন. বাদিপক্ষ মামলাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করলেও এবং জনৈক রেজভী হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত এবং অন্যদের জড়িত থাকার বিষয় নাম প্রকাশ করলেও পরে জেলখানায় রেজভীকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায় যে সালমান শাহ হত্যার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এতে প্রমাণিত হয় যে তার স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছা প্রদত্ত ছিল না। মূলত সালমান শাহর সঙ্গে নায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের সূচনা হয়। কলহের কারণেই সে আত্মহত্যা করে। তাই সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যাই।
আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ফের নারাজী দাখিল করা হয়। যার ভিত্তিতে আদালত ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
প্রতিক্ষণ /এডি/বাবর