সুন্দর, তাই বলে এত্ত সুন্দর!

প্রকাশঃ মার্চ ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Capture2রং বলতে শুধু সাদা আর কালো। তাতেই স্বর্গীয় সুষমা এর রূপে। চোখে পড়লে নজর ফেরানো দায়। আর যখন সে ওড়ে, সে দৃশ্য যে কত অপরূপ! মনে হয় ‘একটি সুন্দর স্বপ্ন যেন চলে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে।’ সুন্দর স্বপ্ন যেমন ইচ্ছে হলেই ক্ষণে ক্ষণে দেখা যায় না, এই পাখিটির দেখা পাওয়াও তেমনি দুর্লভ।

নাম দুধরাজ। বুলবুলের সমগোত্রীয় নয়, কিন্তু অনেকে শাহ বুলবুল নামেও চেনেন। পাখি বলতেই তার সেই সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে।

তবে এই মুগ্ধতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় শাহ বুলবুলি দেখে। মুগ্ধতার পাশাপাশি বেশ অবাকও হতে হয়। স্বগতোক্তি বেরিয়ে আসে- সুন্দর, তাই বলে এত্ত সুন্দর! আর সেই পাখিও এই বাংলাদেশেই আছে।

উদ্যানে গাছের উঁচু ডালে কিছু সময় বসে হঠাৎই চোখের আড়াল হয়ে গেল। পাখা মেলে দিল গহিন বনের দিকে। সুদীর্ঘ লেজ পাখিটির শারীরিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

লেজের জন্যই ছোট আকারের ঝুঁটিওয়ালা পাখিটি অন্য পাখি থেকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায়। চুলের ফিতার মতো লেজের দুই দীর্ঘ পালক দুই দিক দিয়ে ঝুলে থাকে। যেনবা লতাগুল্মের কোনো অংশবিশেষ। বিশাল লেজের চোখ জুড়ানো এই বাহারি রূপ অরণ্য ভ্রমণের যেন এক অনন্য উপহার।

অপরূপ সুদর্শন বলেই হয়তো ইংরেজিতে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বর্গীয় পাখি’ মূলত পাখিটির নাম ‘এশীয় শাবুলবুলি’ ইংরেজি নাম Asian Paradise Flycatcher । বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone Paradisi। তবে অঞ্চলভেদে দুধরাজ, সাহেব বুলবুলি, শাহ বুলবুল, সুলতান বুলবুল প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এরা ঘাস, লতাপাতা, মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির খুব সুন্দর বাসা বানায়। সাধারণত পুরুষ ও মেয়ে পাখি উভয়ই লাল রঙের হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো পুরুষ পাখি আবার ধবধবে সাদা রঙেরও হয়। তবে এদের সংখ্যা কম।

‘ছেলেপাখিদের গায়ের রং কোনোটার সাদা; আবার কোনোটার লাল। তবে সাধারণভাবে মানুষ সাদা পাখিটিকে ভিন্ন প্রজাতির পাখি বলে মনে করে। দুধের মতো ধবধবে সাদা বলে একে কেউ কেউ ‘দুধরাজ’ বলেও ডাকে। তবে আমরা এই নামটা গ্রহণ করিনি। কারণ এতে লোকজনকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলের লোকেরা পাখিটিকে শাবুলবুলি বলেই ডাকে। এশিয়ার বাইরেও ভিন্ন শাবুলবুলি পাখি রয়েছে। পার্থক্যটা পরিষ্কার করে বোঝার জন্য তাই আমরা এই পাখির নাম দিয়েছি ’এশীয় শাবুলবুলি’।arifce_1275616826_6-terpsiphone-paradisi3

‘অপরূপ সৌন্দর্যে আধার পাখিগুলো উড়ে উড়ে প্রজাপতি, ফড়িং ও ছোট পোকা শিকার করে খায়। গলার স্বর কর্কশ। সাধারণত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়।

আমগাছের আধিক্য আছে এমন এলাকায় এশীয় শাবুলবুলি বেশি দেখা যায়। আমগাছের ডালেই এরা মাকড়সার জাল দিয়ে ঘাস, পাতা, আঁশ জড়িয়ে গোল করে খুব সুন্দর বাসা বানায়। এরা মাকড়সার বাচ্চার পরিত্যক্ত সাদা থলে সংগ্রহ করে এনে বাসার চারদিকে খুব সুন্দর করে লাগায়।

বাসায় বসার পর পাখিটির লেজ বিশেষ ভঙ্গিমায় বাইরে ঝুলে থাকে। এশীয় শাবুলবুলি বর্ষা মৌসুমে বাসা বানিয়ে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ১৫-১৬ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। বর্ষা মৌসুমে আমগাছে পোকার আধিক্য বেশি থাকে বলে খাবারের প্রাচুর্যের সুযোগে এ সময়টাতেই ওরা বাচ্চা ফুটায়।’

এশীয় শাবুলবুলির সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে কারণ এরা অনেকটা মানুষের নাগালের মধ্যে বাসা তৈরি করে। ফলে অতি উৎসাহী ছেলেমেয়েরা পাখিগুলো সহজেই ধরে ফেলতে পারে। কিংবা কৌতূহলবশত পাখির বাসাটা নষ্ট করে দেয়। নিচে বাসা তৈরি করে বলে বিভিন্ন এলাকার আদিবাসীদের হাতে এরা যথেষ্ট পরিমাণে মারা পড়ে।

চা শ্রমিকের ছেলেরা বল্লমের মতো একটি জিনিস নিয়ে খোঁচা দিয়ে পাখিসহ বাসাসমেত গাছ থেকে নিয়ে আসে। খোঁচা খেয়ে পাখিটি তাৎক্ষণিক মারা পড়ে। অথচ এই পাখির শরীরে ২০ গ্রাম মাংসও মেলে না। এশীয় শাবুলবুলি অত্যন্ত উপকারী পাখি। গাছের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এরা গাছ রক্ষা করে।

বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, এশীয় শাবুলবুলি পাখিটির লেজ ছাড়া দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ২০ গ্রাম। আর লেজের দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার। তবে ছেলেপাখির লেজের দৈর্ঘ্য বিশাল- ৩৫ সেন্টিমিটার। ছেলেপাখির দুটি বর্ণপর্ব রয়েছে- ‘সাদা’ ও ‘লাল’ সাদাপর্বে দেহের রঙ বরাবরই উজ্জ্বল। তবে মাথা, গলা, কান-ঢাকনি, ঝুঁটি এবং ডানার পালক কালো থাকে। লালপর্বে এর পিঠের দিক লালচে ও দেহের নিচের দিক ধূসরাভ এবং বাকি অংশ সাদাটে। উভয় পর্বে লেজের পালক ফিতার মতো লম্বা থাকে।

ছেলে-মেয়ে উভয়েরই চোখ কালচে বাদামি এবং ঠোঁট নীল-ধূসর। মেয়েপাখির রয়েছে খাটো ঝুঁটি ও ধূসর গলা। কান-ঢাকনি এবং লেজের লম্বা ফিতা নেই। মেয়েপাখির চেয়ে ছেলেপাখির লেজ তিন গুণ বেশি লম্বা। হঠাৎ যদি এমন একটি লম্বা লেজওয়ালা মরিচা লাল রঙের পাখি চোখে পড়ে, তাহলেও বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই। সেটি নবীন দুধরাজ। ডিম থেকে ফোটার পর হালকা গোলাপিই থাকে এদের রং। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যখন সে যুবক, তখন বদলে যায় রং। সাদা-কালোয় হয়ে ওঠে স্বর্গীয় কান্তিমান। সময় লেগে যায় আড়াই থেকে তিন বছর। গড়পড়তা ১০-১২ বছরের জীবন দুধরাজের, তারপর স্বর্গের পাখির স্বর্গের দিকে যাত্রা।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G