স্বচ্ছ জলে গা ভিজিয়ে !
জহির উদ্দিন মিশু
আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল পাহাড়। পাহাড়ের কোলে দোল খাচ্ছে মেঘরাশি। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে নেমে এসেছে ঝর্নাধারা। সেই ঝর্নাধারা মিশেছে স্বচ্ছ জলের নদীতে। জল-পাহাড় আর সমতলের এই অপূর্ব মিলনমেলা দেখা মেলে কেবল সিলেটেই। তাই সারা বছরই সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সরব থাকে পর্যটকদের পদচারণায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটেই অবস্থিত লালাখাল। বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। কয়েক বছর আগেও স্থানটি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও বর্তমানে এটি বেশ পরিচিত ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে। বিশেষ করে দলবল নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান লালাখাল। লালাখাল! নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে লালপানির খাল বা নদী। কিন্তু লালাখাল গেলে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কোনো পর্যটকের। এ তো লাল নয়, শান্ত নদী দিয়ে বয়ে চলছে সবুজ জল।
এমন সবুজ জলের নদী দেশের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্বচ্ছ জলে যেন প্রতিফলিত হচ্ছে প্রকৃতির রূপ। মাঝে মাঝে নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লাল-হলুদ টিলা। নদীর উভয়পাশে টিলার ওপর সারি সারি গাছপালা। দূরদৃষ্টি আটকে দেয় ভারতের মেঘালয়ের আকাশছোঁয়া পাহাড়। নদী পার হয়ে পূর্বপাড়ে গেলে দেখা মিলবে বিস্তীর্ণ চা বাগান। রয়েছে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। ঘুরতে পারেন চা বাগানের ভাঁজে ভাঁজে।
লালাখালে নৌকাভাড়া করে যাওয়া যাবে একদম ভারতের সীমানা পর্যন্ত। যেতে যেতে চোখে পড়বে নদী থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের বালু উত্তোলনের দৃশ্য। লালাখালের শান্ত-শীতল পানি আর নদী ঘিরে দুইপাড়ের মানুষের কর্মব্যস্ততার চিত্র ভুলিয়ে দেবে আপনার সারা দিনের ভ্রমণ ক্লান্তি। লালাখালের পাশেই রয়েছে নাজিমগড় রিসোর্ট। নিপুণ শৈলীর এই রিসোর্টে রয়েছে ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ আর জ্যোৎস্না যাপনের জন্য নির্মিত টেন্ট সাইড। বন-পাহাড়-নদীর লালাখালের রাতের সৌন্দর্য দেখতে একরাত কাটিয়ে আসতে পারেন এই রিসোর্টে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে সিলেট আসতে পারেন। সিলেট থেকে মাইক্রোবাস বা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে লালাখালে। যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া পড়বে ২৭০০-৩০০০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া পাওয়া যাবে ১২০০-১৫০০ টাকায়।
এছাড়া সিলেট কদমতলী টার্মিনাল থেকেও বাসে যাওয়া যাবে। বাসে গেলে নামতে হবে সারি ঘাট। সেখান থেকে নৌকায় যাওয়া যাবে লালাখাল। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা। লালাখাল গিয়ে নদীতে নৌকা ভ্রমণে গেলে ঘণ্টা প্রতি নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০-৬০০ টাকা। সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটকদের ভিড় থাকে লালাখালে। তাই এ দুই দিন নৌকা ভাড়া একটু বেশি থাকে।