হজের সময় দোয়া কবুলের স্থানসমূহ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
আল্লাহ তায়ালার মানুষের দোয়া পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই শুনেন ও কবুল করেন। তবে কিছু বিশেষ স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সে জন্য সেসব স্থানে মনোযোগ সহকারে, বিনম্রচিত্তে অশ্রুসজল নয়নে দোয়া করা দরকার।
হজব্রত পালনকারীদের জন্য মক্কা-মদিনার সফের দোয়া-মোনাজাত করা ও জীবনের যত চাওয়া-পাওয়া আছে সবকিছু আল্লাহর কাছে তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ মক্কা-মদিনার মাটিতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবিরা যখন, যেখানে এবং যেভাবে দোয়া করেছেন সেভাবে দোয়া করার এক বিশাল সুযোগ আসে।
অন্যভাবে বলা যায়, হজের সফরে দোয়া কবুলের অবারিত সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সেসব জায়গায় অত্যন্ত মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা দরকার। আজ মক্কা-মদিনার এমন কয়েকটি স্থান ও কালের কথা তুলে ধরছি, যেখানে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে।
দোয়া আরবিতেই তরতে হবে এটা জরুরি নয়। আপনি আপনার ভাষায় যত চাওয়া-পাওয়া আছে সব আল্লাহর কাছে তুলে ধরবেন, চোখের পানি ফেলবেন- এ সুযোগ আপনার জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এক. আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ দেখে দোয়া করা। বায়তুল্লাহ শরিফ দেখামাত্র দোয়া করা। বর্ণিত আছে, বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম নজরে আসার পরে যে দোয়া করা হবে তা কবুল হবে।
দুই. মুলতাজাম দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে।
তিন. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দোয়া করা। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই পাহাড়ের মাঝে সাঈ করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব। উভয় পাহাড়ই দোয়া করা ও দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান।
চার. আরাফার মাঠে দোয়া করা। আরাফার মাঠে আরাফার দিবসের মূল অবস্থান ও আমলই দোয়া। এ দিন দোয়া-মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম। জোহর ও আসরের নামাজকে জোহরের প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় করে নিবেন। কোনো সুন্নত বা নফল নামাজ আদায় না করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া-মোনাজাত ও কান্না-কাটিতে ব্যস্ত থাকবে। দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
পাঁচ. মুজদালিফায় দোয়া করা। মুজদালিফায় অবস্থানকালে দোয়া করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ –সূরা আল বাকারা: ১৯৮
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর ‘কুজা’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং সেখানে তিনি অবস্থান করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখভাগে অবস্থিত। একেবারে আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকতে হয়। মূলত এটিই হলো মুজদালিফার মৌলিক আমল।
ছয়. কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করা। দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা।
সাত. বিদায়ী তাওয়াফ শেষে দোয়া করা। হজের সব কর্ম পালন শেষ করে দেশে ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। তাওয়াফ শেষে আপনি মুলতাজামের কাছে চলে যাবেন। মুলতাজামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে দোয়া করবেন। এটিই আপনার শেষ সুযোগ। একে কাজে লাগান। আল্লাহর কাছে যা খুশি আপনি চাইতে পারেন।
আট. জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করা। জমজমের পানি পান করার সময় আপনার যা খুশি আল্লাহর কাছে চাইবেন। এখানে আপনি যা দোয়া করবেন, আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন।
দোয়ার সময় বেশি বেশি কান্নাকাটি করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়ে দোয়া করতে হবে। কারণ, অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।
প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ