হযরত আলী (রাঃ) -এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

aliআলী ইবন আবী তালিব (হযরত আলী) (৬৫৬ – ৬৬১) ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা । তিনি ছিলেন আবু তালিবের পুত্র। তাঁর মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ । হয়রত আলী কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন । শিশু বয়স থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদের সঙ্গে লালিত-পালিত হন । ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি হযরত মুহাম্মদের সাথে নামাজ আদায় করতেন । বালক দের মধ্যে তিনি সর্ব প্রথম বালক যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন একজন অকুতভয় যোদ্ধা । বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্তের জন্য মুহাম্মদ (স) তাঁকে জুলফিকার নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন । খাইবারের সুরক্ষিত কামূস দুর্গ জয় করলে মহানবী তাঁকে “আসাদুল্লাহ” বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন ।

তিনি ছিলেন রাসূল (সা:) এর কন্যা হযরত ফাতেমা (রা:) এর স্বামী । রাসূল (সা:) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করেন তখন হযরত আলীকে রাসূল (সা:) এর বিছানায় রেখে যান । তিনি সাহসের সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন ।

হযরত আলী(রাঃ) একজন দুঃসাহসী এবং দক্ষ কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে প্রায় সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মহানবী(সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা(রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খেলাফতের নির্বাচনের পরপরই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী, মদীনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন, যা ছিল অধিকতর কেন্দ্রীয় একটি স্থান।

তাঁর নির্বাচনের পরপরই তিনি জনগণের বিশেষ করে মহানবী (সাঃ) এর প্রভাবশালী সাহাবী যেমন হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর উত্থাপিত ‘হযরত উসমান(রাঃ)-এর হত্যাকারীদের যথাশীঘ্র শাস্তির জনপ্রিয় দাবীর সম্মুখিন হন।

হযরত আলী(রাঃ) ঘোষণা করেন যে, তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি-শৃংখলা পুনঃস্থাপন করা এবং কেবল তারপরই তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। কিন্তু হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ), হযরত আলী(রাঃ) এর এই সিদ্ধান্তে রাজী হননি; তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ), যিনি প্রকৃত অবস্থা অবগত ছিলেন না, তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর সাথে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে এক সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়াতে যারপরনাই চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তাঁর এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, যদিও, হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং অন্য কোন শত্রুর দ্বারা নিহত হন। হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয় কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তাঁর ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রাঃ) এর রক্ষাবেষ্টনীতে তাঁকে মদীনায় প্রেরণ করেন। এটি ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত; কারণ হযরত আয়েশা(রাঃ) যুদ্ধের সময় উটের উপর সওয়ারী ছিলেন। পরবর্তীতে, হযরত আয়েশা (রাঃ) জীবনভর হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্তা ছিলেন।

উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে, যিনি তখনও তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহণ করেননি, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর নিকট আত্বসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এই অজুহাতে তাঁর নিকট নিজেকে সমর্পণ করেনি যে, হযরত উসমান(রাঃ) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন, তার রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে।

এই বিপর্যস্ত পরাজয়ের পর খারেজীরা হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এবং আমর বিন আস (রাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তী দু’জন হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে যেতে সক্ষম হলেও হযরত আলী (রাঃ) ফযরের নামাজের জন্য মসজিদে যাবার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। দু’দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলীফা ৪০ হিজরীর ২০ রমযানে পরলোক গমন করেন। নিঃসন্দেহে, হযরত আলী (রাঃ) খেলাফতের পবিত্রতা এবং মর্যাদা রক্ষার খাতিরে তাঁর জীবন কুরবান করেন।

তিনিও সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের  সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/এএস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G