২০২২ উন্নয়নের বাংলাদেশ : ঠাকুরগাঁয়ের আলো পালের কঠিন জীবনের গল্প

প্রকাশঃ নভেম্বর ২০, ২০২২ সময়ঃ ৪:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৪১ অপরাহ্ণ

সংগ্রহ

সরকার আর বিরোধী দল কে কি বলল, তাতে কি সাধারণ আম-জনতার জীবনে কোন প্রভাব ফেলছে! ২০০ টাকা লিটার তেল, ১৪০ টাকা দিয়েও চিনি মিলছে না। সবজি হাত দিলেই ১০০ টাকা কেজি! আর চাল-ডালের দামের কথা নাই বলা হলো।

কিন্তু তারপরও দেশ জুড়ে প্রতিনিয়তই মাথাপিছু আয় আর উন্নয়নের ডায়লগ শুনতে হচ্ছে দিনে এনে দিনে ব্যয় করা সাধারণ মানুষ গুলো।

প্রশ্ন হচ্ছে উন্নয়নটা কোথায়? ৬৫ টাকা চিনি ১৪০ টাকা, ৮০ টাকার তেল ২০০ টাকায় কেনা যদি হয় উন্নয়ন, তাহলে তো অবশ্যই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরাদের তালিকায় অবস্থান করছে।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন, হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করে জীবনের কঠিন দিন গুলো পার করা ঠাকুরগাঁয়ের বৃদ্ধ আলো পাল বললেন ২০২২ সালে জীবনের কঠিন গল্প। বলেন, ‘মাটির হাঁড়ি-পাতিল কেনার লোকের এখন খুঁজ মিলে না। সবার বাড়িত এলা কারেন্টের জিনিস। আগের মতোন এলা আর বিক্রি হয় না। আগুত (আগে) সারা দিন গ্রামে-গ্রামে ঘুরি ভালো টাকা বিক্রি করিছু। এলা (এখন) তো ৫০০ টাকা দিনে বিক্রি করিবা পারুনা। এমনি বেচাকেনা নাই, তারপর যে জিনিসপত্রের দাম, হাত দিবা পারুনা। আইজকা যা লাভ হইল, তা দিয়া আলু আর শাক কিনিতে টাকা সব চলি গেল। মাছ-মাংস কিনিলে পুঁজি শেষ হইয়া যাইব।’

সারা দিন ভ্যান চালিয়ে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন এই বৃদ্ধ আলো পাল (৬১)। বাড়ি ফেরার পথে তার সঙ্গে দেখা হলে বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলো পাল। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে আসছেন তিনি। তবে আগের মতো বিক্রি না হওয়া এবং দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

আলো পাল বলেন, যুদ্ধ যে হইল সেলা মোর বয়স ছিল সাড়ে আট বছর। যুদ্ধের আগুত বাপসহ সবাই ঠাকুরগাঁও চলে আসি। মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করা হামার বাপ-দাদার পেশা। এলাও ওই কাজ করেই সংসার চালাছি। ভাড়ত করিয়া মাটি আনা, তারপর পুড়াসহ গ্রামত ঘুরে বিক্রি করিবা লাগে। আগুত সারা দিনে বাহির হইলে ভালোই বেচা যাইতো। আর চাহিদাও ছিল মানুষের বেশি। এখন আর আগের মতোন মাটির হাঁড়ি পাতিলের চাহিদা নেই।

তিনি আরও বলেন, মানুষ এলা ডিজিটাল হই গেছে। ছুয়াডাক (ছেলে) কহিচু এইলা কাম করা যাবেনি। সংসার চালাবার পারিবনি। আবার এলা জিনিসের দাম। যেইখানে দাম ছিল দশ টাকা ওইখান এলা পনেরো টাকা। আইজকা যা লাভ করিনু, আলু, শাক আর মুলা কিনিতেই শেষ হইয়া গেল। এ রকম করেই জীবন চালাবা হবে হামাক।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G