অবসরে ধর্মসাগরের পাড়ে
জহির উদ্দিন মিশু
বাংলাদেশের যেসব এলাকায় প্রাচীনকালে সভ্যতা বিকাশ লাভ করে তার মধ্যে অন্যতম কুমিল্লা।প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এ এলাকায় মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল। গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। তবে সে সবের খুব কমই উদঘাটিত হয়েছে। পাথরের অপ্রাচুর্যতায় কাঠ-বাঁশ বা পোড়ামাটিতে তৈরি আবাস, নগর বা ব্যবহার্য নিদর্শনের প্রায় সবই হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। তবে নিকট অতীতের কিছু নিদর্শন এখনও পাওয়া যায়। ধর্মসাগর তার অন্যতম।
কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ বিশাল আকারের দীঘিটি। বর্তমানে কুমিল্লা শহরের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ধর্মসাগর। এটি আজ একটি মিলনস্থলও বটে। দীঘি দর্শনে ভ্রমণকারীদের মনকে ছুঁয়ে যায় মনোমুগ্ধকর এক ভালোলাগার পরশে। বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলো যখন তেজহীন হয়ে আসতে থাকে, ঠিক তখনই শত শত দর্শনার্থীর পদভারে ধীরে ধীরে মুখরিত হতে থাকে ধর্মসাগর পাড়। এ যেন এক মিলন মেলা। ধর্মসাগরের উত্তর কোণে রয়েছে কুমিল্লার শিশুপার্ক। এই শিশুপার্কে বসে সাগরের দৃশ্য উপভোগ করা যায়, সবুজ শ্যামল ও বিশাল বড় গাছ নিয়ে এই শিশুপার্ক। এই শিশুপার্কে বসলে মন ভরে যায় ভালো লাগার পরশে।
দীঘিপাড়ের সবুজ বনানী ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। থরে থরে সাজানো বড় বড় গাছের সারি। তার মাঝে সিমেন্টে বাঁধানো বেঞ্চ। এক কথায় অপূর্ব। বিকেল বেলাটা যারা ঘুরতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। আপনি ইচ্ছে করলে নৌকা ভাড়া করে দিঘির চার পাশ ঘুরে আসতে পারেন। এটি আপনার জন্য হতে পারে একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
সব মিলিয়ে পরিবেশটা খুব সুন্দর। আশে পাশের ফুচকা আর চা-পানের দোকান আপনাকে দিবে বাড়তি আনন্দ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা ধর্মপালের নামানুসারে এই দীঘির নাম হয়েছে ধর্মসাগর।প্রায় ২০০-২৫০ বছর আগে আনুমানিক ১৭৫০ অথবা ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রজাহিতৈষী রাজা ছিলেন ধর্মপাল। তিনি ছিলেন পাল বংশের রাজা। বাংলায় তখন ছিল দুর্ভিক্ষ। রাজা দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের সাহায্যের জন্য এই দীঘিটি খনন করেন।
যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা থেকে কুমিল্লা ৯৬ কিলোমিটারের পথ। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাস যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে প্রাইম, তিশা, এশিয়া লাইন ইত্যাদি বাসে আপনি সরাসরি যেতে পারেন। বাস ভাড়া জনপ্রতি ১১০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়া, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করেও আপনি কুমিল্লা যেতে পারেন। কুমিল্লা শহরে নেমে যে কোন রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ধর্মসাগর। প্রাচীন সভ্যতার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে কালের স্রোতে। যা টিকে আছে তাও কম গৌরবের নয়। প্রাচীন ধর্মসাগর আমাদের সেই সমৃদ্ধ অতীতেরই স্মৃতি বহন করে। তাই সময় করে ঘুরে আসুন কুমিল্লার ধর্মসাগর।