অবহেলায় পিরোজপুরের কুলু বাড়ির প্রাচীন স্থাপনা !

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫ সময়ঃ ৩:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০৭ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপার্ট, প্রতিক্ষন ডটকম:

devdas-pic-2-thumbnailপ্রায় দুইশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যেরর সাক্ষ্য বহন করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী ইউনিয়নে কুলু বাড়ির প্রাচীন পুরাকীর্তির স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

ঐতিহাসিক নিদর্শনের সুরম্য স্থাপনা গুলো সুরক্ষা ও সংস্কারের অভাবে এখন বিলীনের দিকে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরের বাইরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে প্রাচীন পুরাকীর্র্তিগুলো।

জনশ্রুতি আছে,আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে বরিশালের প্রত্যন্ত কোন এলাকা থেকে বৃন্দাবন চন্দ্র কুলু এখানে আসেন ব্যবসার উদ্দ্যেশ্যে। তখন থেকেই তাদের গোড়াপত্তন হয় এখানে।

বৃন্দাবনের তিন ছেলে পূর্ন চন্দ্র রায়, মহশে চন্দ্র রায়, গুরু চরণ রায় এর মধ্যে বড় ছেলে পূর্ন চন্দ্র রায় তখনকার জমিদারদের নিকট থেকে এ এলাকার জমিদারীর সুযোগ লাভ করে। আর তখন থেকেই তাদের পদবী কুলু থেকে পরবির্তন হয়ে যায় রায় পদবী ব্যবহার হতে থাকে। এ বাড়ির এই বিশাল প্রাসাদ এবং নয়াভিরাম মন্দির তিনিই নির্মান করেন। তিনি মারা যান ১৯৫১ সালে।

প্রাচীনকাল থেকে এ বাড়িকে ঘিরে মেলা বসত। আর নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হত । প্রতিবছর নানা উৎসবে দূর দূরান্তের মানুষ এখানে উৎসবে যোগ দিয়ে মিলন মেলায় মেতে উঠতেন। কালের বিবর্তনে আজ অনেক কিচুই হারিয়ে গেছে।

তবে এখানে এখনও প্রতিবছর এখানে দূর্গা উৎসব,কালী পূজা ও বাৎসরিক কীর্তণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগের মত অনুষ্ঠানে এখন আর সে প্রাণ নেই। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কুলু বাড়ির ঐতিহ্য, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নয়নাভিরাম সুরম্য অট্টালিকা আর কারুকাজ সম্বলিত মন্দির।

কিংবদন্তী রয়েছে কুলু বাড়ির মাটির নীচে মাটির কলসি ভর্তি প্রচুর স্বর্ণ মুদ্রা আর নানা দামি অলংকার গচ্ছিত ছিল। ওই সব ধন সম্পদের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও কালের স্থাপনাগুলো এখন কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে।

মিরুখালীর কুলু বাড়ির ভবনের ইটবালু খসে পড়ছে মিরুখালীর কুলু বাড়ির ভবনের ইটবালু খসে পড়ছেসরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরুখালীর কুলু বাড়ির (বর্তমান রায় বাড়ি) মূল ভবন, মন্দির ও মঠ।

devdas-pic-0001-thumbnailনান্দনিক নকশা আর অসাধারণ নির্মাণ শৈলীর এসব স্থাপনা সংস্কারের অভাবে প্রতিনিয়ত খসে ও ধসে পড়ার উপক্রম। এছাড়া এখানে রয়েছে নান্দনিক নির্মাণ শৈলী আর দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত অতি পুরাতন তিনটি বিশালাকৃতির অট্টালিকা।

একটি দারুন নকশা খচিত দূর্গা মন্দির ও বেশ কিছু কয়েকটি মঠ। এর মধ্যে কুলু বাড়ির দুটো সুরম্য মূল ভবন বহু বছর ধরে পরিত্যাক্ত।

কুলু বংশের বংশধর পংকজ রায় বলেন,এ অঞ্চলে এমন স্থাপনা,মন্দির আর দ্বিতীয়টি নেই।

এটি মঠবাড়িয়া জনপদের এখন দর্শনীয় স্থান। প্রাচীন নিদর্শন হলেও নানা সংকটে বংশ পরম্পরায় এসব স্থাপনা সংস্কার ও সুরক্ষার তেমন একটা সংগতি নেই।

ফলে বংশগতভাবে এ ঐতিহ্য কার্যকর সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছেনা। এ জনপদের ঐতিহ্য হিসেবে স্থাপনাগুলো সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছি। সরকার এ বাড়ির নিদর্শণগুলো সুরক্ষার দিকে নজর দিলে এসব প্রচীন স্থাপনা একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহিলা মহা বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. ইকতিয়ার হোসেন পান্না বলেন,মিরুখালীর কুলু বাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো এখন ঐতিহাসিক নিদর্শণ। এ জনপদের সংস্কৃতির অংশ ।

ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা সুরক্ষার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রের । কারন প্রাচীন এ নিদর্শন গুলো উপকুলীয় মঠবাড়িয়া জনপদের দর্শনীয় স্থান। এসব সুরক্ষা করে সংরক্ষণ এখন জরুরী বিষয়।

মিরুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সোবহান শরীফ বলেন,কথিত আছে এ বাড়ির সম্মান বা জমিদারী দাপট এতই ছিল যে, একদা কুলু বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ জুতা পায়ে দিয়ে কিংবা ছাতা মাথায় দিয়ে হেটেও যেতেন না। মিরুখালীর এই বাড়িটি হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান যদি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর রক্ষনাবেক্ষন করে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G