অর্থমন্ত্রীকে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ অবদান রেখেছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে মন্তব্য করেছেন, তার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য কমায় না, যারা এই ঋণের ব্যবসা করে তাদের লাভ হয়। আর অর্থমন্ত্রী এসব বিবেচনায় না নিয়ে এমন একজনের প্রশংসা করেছেন যার কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ৬০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২২ শতাংশ করেছে। এটা আরো কমাবে। যদি ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করত, তাহলে কেন এই হার এক সময় ৬০ শতাংশ ছিল।
‘কদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী খুব ক্ষুদ্রঋণের প্রশংসা করে বললেন যে, ক্ষুদ্রঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন যদি তার জন্যই হতো, তাহলে আর ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন, কীভাবে? আর এটা ২২ ভাগে নেমে এসেছে কবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেন, তারা সম্পদশালী হয়, তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চ হারে সুদ দিতে হয়। গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ চলে যায়। সে কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। যারা এই ব্যবসা করে, তারা চায়ও না এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে এলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে সেদিন তিনি (অর্থমন্ত্রী) এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। অথচ তিনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ৭১ সালের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী মতো বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ওপর একই কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালে হানাদার বাহিনী যেমন বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, তেমনি বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেত-কর্মী থেকে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ, কেউ রেহাই পায়নি তাদের নির্যাতনের হাত থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়ে উঠতে হবে মাকে। তারা কোথায় যাচ্ছে কার সঙ্গে মেলা-মেশা করছে সব খোঁজখবর রাখতে হবে। সন্তানকে কেবল শাসন নয়, আদর-যত্নও করতে হবে।
ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সব ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে নারীর অবদানের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা সব সময় বাবার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) পাশে থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রেখেছেন।’
প্রতিক্ষণ/এডি/অনু