অলৌকিক ক্ষমতা বাড়াতে ৪২ নারী হত্যা!

প্রকাশঃ জুন ১১, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

Black-Magicইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার রাজধানী মেদান। এখানকার একটি আদালত ভবন লোকে লোকারণ্য। আহমাদ সুরাদজিকে পরপর ৪২ জন নারীকে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন বিচারক। এর আগে অনেক সপ্তাহ ধরে চলা বিচার কাজের সময় উঠে আসে স্বাক্ষীদের বক্তব্য। তারা জানান, কিভাবে তাদের আত্মীয়রা হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে। রায় ঘোষণার পর ছোট্ট আদালত কক্ষে উপস্থিত স্বজনেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, যেখানে সেসময় ১০০’র বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন আরো বহু মানুষ।

এর আগে পুলিশ সুরাদজির বিরুদ্ধে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর মাধ্যমে নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ৪২ জন নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে মামলা করে, যাদের সবার বয়স ছিল ১১ থেকে ৩০ বছরের মাঝে। ১৯৯৭ সালের এপ্রিলের ২৮ তারিখ (উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে মে মাসের ২ তারিখ) পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

আহমাদ সুরাদজি যার আরেক নাম নাসিব কেলেওয়াং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৫ বছরে ১৬ জন মেয়েকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে তদন্ত করার পর তার বাড়ি ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরো ২৫ জন নারীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এবার পুলিশ সুরাদজিকে চেপে ধরে। শেষ পর্যন্ত সে জানায়, আসলে ৫ বছর নয়, টানা ১১ বছরে সে মোট ৪২ জন মেয়ে ও নারীকে হত্যা করেছে। আর এসব হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুম করতে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী ও বোনেরা। পুলিশ সুরাদজির তিন স্ত্রী ও তার বোনদেরও গ্রেপ্তার করে।

সুরাদজি নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি একজন প্রেত সাধক। স্থানীয়রা বিশ্বাস করতো, তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে। তাই তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছে আসতেন।
অনেক নারী তার কাছে আসতেন যাতে তিনি জাদুমন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ছেলেবন্ধু বা স্বামীকে বশীভূত করে রাখেন। এছাড়া অনেকে সম্পত্তি লাভ কিংবা পুরুষের চোখে যাতে নিজেকে আরো আকর্ষণীয় দেখায় সেজন্য আসতেন। আর তারা যে এ ব্যাপারে কোন জাদুকরের সাহায্য নিচ্ছিলেন সেটা তাদের পরিবারের সদস্যরা জানতো না। তাই সুরাদজিকে কেউ সন্দেহই করেনি।

সুরাদজি তাদের সবার কাছ থেকে অর্থ নিতো, যার পরিমাণ ছিল ২০০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার। নারীদেরকে নিয়ে যাওয়া হতো একটি আখের ক্ষেতে। এটা ছিল তার বাড়ির কাছেই। নিজের কালো জাদুর অংশ হিসেবে তাদেরকে মাটিতে কোমর পর্যন্ত পুঁতে রাখা হতো। এরপর সে প্রতিটি মেয়ের গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে তাদেরকে হত্যা করতো, তাদের মুখ থেকে বের হয়ে আসা লালা পান করতো। এরপর মৃতদেহগুলোকে বিবস্ত্র করে তাদের মাথা সুরাদজির নিজের বাড়ির দিকে রেখে তাদেরকে মাটিচাপা দিতো।

সুরাদজির বিশ্বাস ছিল এর ফলে তার জাদু ক্ষমতা আরো শক্তিশালী হবে। পরে সে পুলিশকে জানায়, ‘আমার বাবার আত্মা এসে এক রাতে আমাকে বলেন যে, যদি আমি ৭০ জন নারীকে হত্যা করে তাদের মুখের লালা খেতে পারি তবে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবো। এ ঘটনার সময়কাল ১৯৮৮ সাল।

সুরাদজির গ্রামের অধিবাসীরা তার বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য তাকে সম্মান করতো। কিন্তু এ ঘটনা প্রকাশ পাবার পর তারা হতবিহবল হয়ে পড়ে। কেউ নিখোঁজ আছে কিনা পুলিশ স্থানীয় জনগণকে জানাতে অনুরোধ করলো। প্রায় ৮০টির মতো পরিবার জানালো, তাদের পরিবারের কোন না কোন মেয়ে নিখোঁজ হয়ে আছে। পুলিশের আশঙ্কা লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

১ জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া এই বিচারকাজে তার বিরুদ্ধে ৩৬৩ পাতার অভিযোপত্র জমা দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ এপ্রিল সুরাদজিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সুরাদজির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তার দাবি, ব্ল্যাক ম্যাজিক স্রষ্টার কাছ থেকে আসে ও সেটা এখন আর তার কাছে নেই। তিনি তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চায় যা প্রত্যাখ্যাত হয়। ৪২তম মৃতদেহ উদ্ধারের পর ২০০৮ সালের ১০ জুলাই ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G