বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী নতুন জাতি নির্মাণের এক নিঃসঙ্গ নায়কের আত্মকথন। এক নতুন রাজনীতি ও নতুন জাতির জন্ম দরকার- এই কেন্দ্রীয় ভাবনা নিয়েই আত্মজীবনীর অসমাপ্ত উপহার।
বঙ্গবন্ধুর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ধ্রপদী ভঙ্গীতেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জীবন কথা। যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ১৯৭১ সালে পূর্ণ মুক্তির দীক্ষা নেবে, তার গোড়ার দিকে স্বাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আখ্যান পাওয়া যাবে এই অজ্ঞাত পূর্ব, অধুনা আবিষ্কৃত ও গদ্য প্রকাশিত এই স্মৃতিকথনে।
পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক আলাপন বন্দোপাধ্যায় ‘শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের আলোচনাকালে ‘বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে এই মন্তব্য করেন। পাক্ষিক ‘দেশ’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি (আলাপন) এসব কথা বলেন। নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে আলাপন বন্দোপাধ্যায়ের এই নিবন্ধটি খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন অনেক লেখক, বুদ্ধিজীবি এবং রাজনীতিবিদ।
‘জাতির জীবন : দেশ ও নায়ক’ শীর্ষক এই নিবন্ধে আলাপন বন্দোপাধ্যায় বলেন,একদিকে সুভাষ চন্দ্রের অসাপ্রদায়িক রাজনীতির প্রতি অনুরাগ, অন্যদিকে বর্তমান মুসলমানের জন্য এক মুক্তির স্বপ্ন দেখা পবিত্র পাকিস্তনের ছবি- এক নতুন দেশে ইসলাম আবার নতুন সমাজের কারিগর হবে, এই দৃঢ় বিশ্বাস- এসব নিয়েই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রথম যৌবন।
বঙ্গবন্ধুর এই আত্মজীবনীকে ভারতের সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায, বিপিন চন্দ্র পাল, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সুবাষ চন্দ্র বসু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো অনেক অগ্রগণ্য নেতা এবং সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউয়ে, স্বাধীন ঘানার এনক্রমা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মচরিতের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের পুরোধা পুরুষ কেসলি হেফোর্ড, জাম্বিয়ার মার্কাস গার্ডে, জামাইকার কেনেথ কাউন্ডা কিংবা কেনিয়ার জোলো কেনিয়াটা প্রমুখের স্মৃতিচর্চাও একই গোত্রভুক্ত।
দেশ নায়কে প্রবেশ করে, নায়ক দেশে প্রবেশ করেন, পরস্পরের স্নেহাবিষ্ট হয়ে উভয়ে একত্রে জগৎসভায় উজ্জ্বল স্থান দখল করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐতিহাসিকদের এই দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করলে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিকে বাংলাদেশের ক্লাসিক্যাল জাতীয় আত্মকথা বলে গ্রহণ করা যেতে পারে।
একদিকে পশ্চিম পাকিস্তান ও উর্দুর ঘনায়মান ও ক্রমবর্ধমান প্রভাব পূর্ব পাকিস্থানের বাঙালি মুসলমানকে অধীর করে তোলে। কৃষক প্রজার জন্য এক ন্যায়ের স্বপ্ন, নবগঠিত পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার তীব্র আর্তি এবং অনাদৃত মাতৃভাষার জন্য অনির্বচনীয় মমত্ব নিয়ে ক্রমেই জন্ম নিতে থাকে এক অন্যতর ও নতুনতর স্বাধীনতার সংকল্প- শেখ মুজিবের বর্ণনায় উঠে এসেছে বলে তিনি তার নিবন্ধে বলেন ।
আলাপন বন্দোপাধ্যায় লিখেন, পশ্চিম পাকিস্তান ও মুসলিম লীগ ক্রমেই আগ্রাসী, ক্ষমতাতান্ত্রিক ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, বৃহত্তর জনতার বিপুলতর আর্তিতে এক নতুন রাজনীতি ও নতুন জাতির জন্ম দরকার- এই কেন্দ্রীয় ভাবনা নিয়েই আত্মজীবনীর অসমাপ্ত উপহার।
প্রায় সোয়া পৃষ্ঠার নিবন্ধে উপসংহারে বলা হয়, এই গ্রন্থ স্বহস্তে এক নতুন জাতির নির্মাণে এক নিঃসঙ্গ নায়কের কাহিনী সর্ব অর্থেই তাঁর জাতির আত্মজীবনীর অসমাপ্ত পান্ডুলিপি হয়ে উঠেছে। সূত্র : বাসস।
প্রতিক্ষণ/এডি/একে
=====