আত্মরক্ষায় মাটির সেনাবাহিনী

প্রকাশঃ মে ২৭, ২০১৫ সময়ঃ ৮:০০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

Terracotta-Soldiers-in-china1ছোটবেলা থেকেই চীনের প্রায় প্রতিটি শিশু একটি গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়। গল্পটি এরকম, এক দেশে খুব শক্তিশালী এক রাজা ছিল। বিশাল ছিল তার সেনাবাহিনী। আশেপাশের সব রাজ্যের রাজাদের যুদ্ধে পরাজিত করে বিশাল চীন দেশ তৈরি করেন।

আশেপাশের সব রাজত্ব দখলে চলে আসায় আর যুদ্ধের কোন ভয় নেই। প্রজারা সব সুখেই আছে। তখন রাজা মাটির এক সেনাবাহিনী বানানো শুরু করলেন। হাজারে হাজারে সৈন্য সামন্ত, হাতি, ঘোড়া, রথ আর সত্যিকারের সব অস্ত্রশস্ত্র!

রাজা তার মৃত্যুর আগে নিজের মৃতদেহ রাখার জন্যে একটা সমাধি মন্দির বানালেন। সমাধি মন্দিরের চারপাশে মাটির তৈরি সৈন্যবাহিনী এক সারিতে দাঁড় করিয়ে ঢেকে দেয়া হলো মাটি দিয়ে । সাথে রাজ্যের সব সম্পদ ও দেয়া হল। যাতে মৃত্যুর পরের পৃথিবীতে রাজার অর্থের কোন সমস্যা না হয়। ঐ সময় অন্য কোন রাজাও ঝামেলা করতে পারবে না। কারণ তার মাটির সেনাবাহিনী আছে।

গল্পটা শুনতে অদ্ভুত হলেও ১৯৭৮ সালে প্রমাণিত হয় যে, শত শত বছর ধরে বাচ্চাদেরকে রাজার যে রূপকথা শোনানে হতো সেটি একটি সত্যি ঘটনা। একদিন কৃষকেরা তাদের চাষের জন্যে জমি খুড়ছিলো। হঠাৎ করেই পোড়ামাটির একটা মানুষের মাথা কোদালের কোপে বেরিয়ে এলো। এই ঘটনা চারদিকে বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়লো। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা একেবারে উড়ে চলে গেলেন ঘটনাস্থলে।

Terracotta-Soldiers-in-china2ঘটনাটি ঘটে চীনের একেবারে মূল কেন্দ্র শিআন প্রদেশে। এরপর প্রত্নতত্ত্ববিদদের দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাটির প্রায় পনেরো বিশ ফুট নীচে লাল মাটির তৈরি আট হাজার সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী পাওয়া যায়। এ সব মূর্তির পাশাপাশি প্রায় একশ কাঠের যুদ্ধ রথ, বাস্তবের ঘোড়ার আকারের ছয়শো মাটির ঘোড়া, আর কয়েক হাজার যুদ্ধাস্ত্রও পাওয়া গেছে। যুদ্ধাস্ত্রগুলোর প্রতিটিই আসল! আর সেসব এমন এক সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি যে দীর্ঘ দুই হাজার বছর মাটির নীচে থাকার পরও তাতে মরিচা পড়েনি।

চীনের প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার এই পোড়ামাটির সেনাবাহিনী। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই বিশাল সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে সম্রাট কিন যদি সাত লক্ষ লোকও ব্যবহার করে থাকেন তবে তাদের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় ত্রিশ বছর!

আলাবামার বামিংহাম মিউজিয়ামের এশিয়ান আট বিভাগের কিউরেটর ডক্টর ডোনাল্ড উড এই সেনাবাহিনী সম্পর্কে বলেছেন, “প্রত্যেকটা সৈনিকের চেহারা আলাদা। এদের কারও মুখে হালকা হাসির রেখা আছে, কারও চোখ মুখ শক্ত। কারও বয়স খুব কম, আবার কেউ মধ্যবয়স্ক। অনেকের গোঁফ আছে আবার অনেকের শুধু দাড়ি। এদের চুল আঁচড়ানোর মধ্যেও পার্থক্য আছে।” ড. উডের ধারণা, যে সব কুমাররা সৈনিকদের চেহারার অংশ তৈরি করেছে তারা কাজের সময় সামনে সত্যিকারের সৈনিকদের বসিয়ে রেখেছিলো।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G