আজব তুয়ারেগ জনগোষ্ঠী!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
সাহারা মরুভূমির উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে প্রায় চারশ বছর ধরে সেখানে বাস করে আসছে তুয়ারেগ নামের এক জনগোষ্ঠী। মূলত নাইজার, মালি, আলজেরিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম লিবিয়া, বারকিনা ফাসো, এসব অঞ্চলেই এদের বেড়ে ওঠা।
বহু বছর ধরে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে বসতি গড়েছে। এ সময় তাদেরকে পথ দেখিয়েছে অনেকেই। এমনকি দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষেরাও তাদের প্রখর ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে ধূসর মরুভূমিতে তাদের পথ বাতলে দিয়েছেন। রহস্যময় এ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে এক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেইলিমেইল।
তুয়ারেগ জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করলেও তাদের চলাফেরা বা জীবন ধারণে ইসলামী শরীয়তের তেমন একটা প্রভাব দেখা যায় না। বরং আদিবাসী উপাদান থাকলেও তাদের জীবনকে অনেকটা পাশ্চাত্যপন্থার সাথে তুলনা করা যায়।
নারীরা এখানে বিবাহবহির্ভূত একাধিক সঙ্গী রাখতে পারে। এদের মধ্যে পুরুষদের মুখ ঢেকে রাখতে হয়, নারীরা তাদের মুখ ঢাকে না। কেননা তারা মনে করেন, মুখ ঢাকলে নারীর সুন্দর মুখ দেখা থেকে পুরুষরা বঞ্চিত হয়। এখানকার বিয়ের আগে নারীরা যত খুশি প্রেমের সম্পর্ক গড়তে পারে।
ডেইলিমেইল এর ফটোগ্রাফার হেনরিয়েটা বাটলার প্রায় বিশ বছর ধরে এই জনগোষ্ঠীকে অনুসরণ করে আসছেন। তিনি বলেন, এখানে ছেলেদের যা স্বাধীনতা, নারীদেরও তাই। বছরের পর বছর ধরে এ গোত্রের পুরুষরা নারীদের তাঁবু বহন করে আসছে। তাঁবুতেই পরিবার পরিজনসহ বসবাস করে আসছে তারা। যদি কোন নারী অন্য কোন পুরুষকে তার তাঁবুতে আমন্ত্রণ জানাতে চান, তাতে তার কোন বাঁধা নেই।
অবশ্য সম্প্রদায়টির নিজেদের নিয়ম কানুন আছে এবং সবাই সম্মানের সাথে তা মেনে চলে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা না থাকায় এখানকার নারীরা দেরীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নারীদের নিয়ে প্রেমের কবিতা লিখেন পুরুষ; যেসব কবিতায় প্রেয়সীকে পেতে জারি থাকে প্রার্থনা। অবশ্য নারীরাও পুরুষদের নিয়ে প্রেমের কবিতা লিখে থাকেন। বিয়ে করলেও ক্ষমতা বা সম্পত্তি কোনটাই কমে না এ গোত্রের নারীদের।
যদি কোন পর্যটক এ গোত্রের কোন তাঁবু পরিদর্শনে যান, তাহলে নারীর ক্ষমতা আর নিয়ন্ত্রণ দেখে অবাক হতে পারেন। খাবার তৈরী করা কিংবা বাচ্চাদের লালনপালনই এখানকার নারীদের মুল কাজ নয়। বরং তাঁবু, পশু সবকিছুর মালিকই নারী। সাহারার এ অঞ্চলে পশু খুবই দামী সম্বল।
সেখানকার একজন বাসিন্দা সাংবাদিক পিটার গুইনকে বলেন, পশুই তাদের কাছে সব। ‘আমরা তাদের দুধ পান করি, তাদের মাংস খাই, মারা যাওয়ার পর তাদের চামড়া ব্যবহার করি এমনকি এ পশুই আমাদের মূল বাণিজ্য।’
এখানে ডিভোর্সের মাধ্যেমে যেসব বিয়ের সমাপ্তি হয়, সেসব ক্ষেত্রে নারীরাই পশু, তাঁবুসহ দরকারী অন্যন্য সরঞ্জামের মালিক হন। আর বিবাহ বিচ্ছেদ এখানে কোন লজ্জা বা লুকোছাপার কোন ব্যপার নয়। বরং পরিবারেরর পক্ষ থেকেই মেয়েদের ‘ডিভোর্স পার্টি’তে পাঠানো হয় যাতে, পুরুষদের কাছে এ খবর পৌঁছে যায় যে, তারা আবারও একা!
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর