আজ বন্ধুত্বের দুয়ার খোলা
রনজু মিয়া:
বন্ধুত্বের কোনো দিনক্ষণ নেই, সময়-অসময় নেই। মাঝরাত্তিরে ফোন করে বন্ধুকে যদি পাশেই না পাই তবে কিসের বন্ধুতা? তারপরও বিশ্বজুড়ে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস পালন করা হয়। তাই আজ বন্ধুত্বের দুয়ার খোলা।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বন্ধুত্বের ধরনও পাল্টে গেছে অনেক। রসিকেরা বলেন, এখন বন্ধু দুই ধরনের- রিয়েল ফ্রেন্ড ও ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড। যাক, তারপরেও রিয়েল ফ্রেন্ড ও আনরিয়েল ফ্রেন্ড- এভাবে বলা হয় না। মুঠোফোন, ইন্টারনেটের এই যুগে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমাদের বন্ধু বাড়ছে।
তবে দেখা-বাস্তবেরই হোক আর অদেখা-ফেসবুকেরই হোক, বন্ধু সে তো বন্ধুই। আজকাল ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করছে মানুষ। হয়ত জীবন বাঁচাতে জরুরি প্রয়োজনে কারও রক্ত দরকার, ফেসবুকে দিয়ে দাও একটা পোস্ট। ব্যস, মুহূর্তে অদেখা বন্ধুরা বাড়িয়ে দিচ্ছে সাহায্যের হাত। ফেসবুক পোস্টে লাইক, কমেন্ট করতে গিয়ে প্রেমেও পড়ছেন অনেকে। সেসব নিয়ে নাটক, সিনেমা, গানও হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা হওয়ার আগে এদেশে কলম-বন্ধু হওয়ার প্রচলনও ছিল। সে কথা আমরা ভুলিনি। অচেনা সে বন্ধুর জন্য কত বিনিদ্র রাত কেটেছে অনেকের। বন্ধুর জন্য আবেগের কালি ঝরেছে ডায়েরির পাতায়। তারপর ডাকযোগে পাঠিয়ে উত্তরের প্রতীক্ষা। আহ! কি দিনই না ছিল সেসব।
তারপরও দেখা-বাস্তবের বন্ধুর জায়গা আজ পর্যন্ত কেউ নিতে পারেনি। ফেসবুক, মুঠোফোন- যে মাধ্যমেই যার সঙ্গেই বন্ধুত্ব হোক, তার কথা বলতে সেই দেখা বন্ধুর সঙ্গেই দেখা করতে হয়। একসঙ্গে সময় কাটিয়ে নানা রসে-রঙ্গে অদেখা সেই বন্ধুর কথা বলতে হয়। নতুন পরিচয় হওয়া মেয়েটি বা ছেলেটি দেখতে কেমন, তার চাহনি কেমন এসব বিষয় বিশ্লেষণ করতে হয় চেনা বন্ধুটির সঙ্গেই।
তবে বাস্তব, অবাস্তব যে জগতেরই হোক না কেন গুণীজনেরা সব সময়ই বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। কারণ বন্ধুত্বেই স্বর্গবাস, বন্ধুত্বেই সর্বনাশ। অনেক দিনেসর চেনা বন্ধুও জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি করতে পারে। আবার স্বল্প পরিচয়ের ফেসবুক বন্ধুটিও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকতে পারে। তাই বলে কি বন্ধুত্ব পাতা বন্ধ করব? মোটেই না। শুধু আজ নয়, সব দিনই বন্ধুত্বের দুয়ার থাক খোলা; আজ না হয় একটু বেশিই থাক?
রনজু মিয়া : সাংবাদিক
=====