আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে মান্না
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
জাতীয় নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আটকের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে রাজধানীর বনানীর ই-ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের (বাসা নম্বর-১২) তার ভাতিজি শাহনামা শারমিনের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি।
গ্রেফতারের বিষয়টি তার স্ত্রী মেহের নিগার এবং ব্যক্তিগত সহকারী নিশ্চিত করেছেন।
মেহের নিগার জানান, আজ ভোর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে বনানীতে তাদের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা আটক করেছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্নার ভাজিতি শাহনামা শারমিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার দিনগত রাত তিনটার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদের ঘরের দরজায় নক করে। তারা জানান, মাহমুদুর রহমানকে তারা নিয়ে যেতে এসেছেন।
এ সময় তার চাচা মান্না ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি রাত ১১টার দিকে তাদের বাসায় আসেন।
পরে ডিবি পুলিশ আসার খবর জানালে মাহমুদুর রহমান মান্না পোশাক পরার সময় চান। পোশাক পরা শেষে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে নিয়ে চলে যায়।
তবে তার চাচাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি শাহনামা শারমিন।
এ বিষয়ে বনানী থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর জানান, ডিবি পরিচয়ে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে গেছে বলে তার স্ত্রী মেহের নিগার বনানী থানাকে জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার রাতে রাষ্ট্রদোহ, সাধারণ মানুষের জানমালের হুমকি ও দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাধারণ জনগণ।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন বেগবান করার বিষয়ে ঢাকার প্রাক্তন মেয়র ও বিএনপির নেতা সাদেক খোকা ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক দুইটি অডিও সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আন্দোলন তরান্বিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি লাশ পড়লেও পড়ুক বলে কথোপকথনে মন্তব্য করেন মান্না।
অডিও ফাঁস হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিল। ছাত্রলীগ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।
এর আগে সোমবার নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি উঠে মন্ত্রিসভায়। সেনা হস্তক্ষেপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার বিষয়ে তার টেলিফোন কথোপকথন নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা তুলেন কয়েকজন মন্ত্রী।
এ কথোপকথনকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকেই মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি জানান। আবার কেউ কেউ মান্নাকে বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মন্ত্রীদের ক্ষোভের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথোপকথনের যে তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে তারা একটা ষড়যন্ত্র নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। এখন আপনারাই চিন্তা করেন, ভেবে দেখেন, কি করা যায়।
সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য মাহমুদুর রহমান মান্নার আগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেছেন। তারা বলেন, মান্না একেক সময় একেক দল করেছেন। কখনও জাসদ, কখনও বাসদ, এরপর আওয়ামী লীগ- এভাবে দল বদল করেছেন। তার নিজের রাজনৈতিক কোনো চরিত্র নেই। এ নিয়ে হাস্যরসও হয় মন্ত্রিসভায়।
এদিকে, সামগ্রিক ঘটনার জন্য বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মান্না। নিজের ফেসবুকে পেজে এক কমেন্টে কথোপকথনের ভিডিও ফাঁসের ঘটনাকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এক সময়ের বামধারার ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না আশির দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। তখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর পদ হারান মান্না। এর পর নাগরিক ঐক্য নামে একটি দল গঠন করেন নিজেই।
প্রতিক্ষণ /এডি/আরিফ