আত্মগোপনে এমপি লিটন
জেলা প্রতিবেদক
চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সৌরভ মিয়ার (৮) দু’পায়ে গুলি করে আহত করার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।
কয়েক দফায় পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়েও মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছে না। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া এ ঘটনার পর এমপি লিটনের স্ত্রী, ভাই ও তার পক্ষের রাজনৈতিক নেতারাও ঘটনা সম্পর্কে বা লিটনের অবস্থান সম্পর্কে মুখ খুলছেন না। জেলার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার কর্মীরা একাধিবার লিটনের বাড়ির কারও বক্তব্য নিতে পারেননি।
এ ঘটনার পর থেকে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। রাজনৈতিক ও সুধী মহলসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে উত্তেজনাসহ ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে এলাকবাসী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) জিন্নাত আলী জানান, এমপি লিটনের বাড়ি বামনডাঙ্গায় র্যাব ও পুলিশ কয়েকবার যায়। কিন্তু তার বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি এমপি সাহেব ঢাকায় গেছেন। মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই মিলটন জানান, ঘটনার পর থেকে এমপি ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা বাজারের সব দোকানপাট রাত ১০টার দিকে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিষ্ণুরাম রায় জানান, ঈদের দু’দিন আগে ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে গিয়ে ওয়ার্ডবয় মাহমুদুল ইসলাম ওরফে মামুনুর রশিদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। মামুনুর রশিদ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় গুলি লাগেনি। এ সময় এমপির এমন কর্মকাণ্ডে হাসপাতালে থাকা রোগী, ডাক্তার ও কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
তিনি আরও জানান, গত শীত মৌসুমে বামনডাঙ্গা আবদুল হক ডিগ্রি কলেজ মাঠে যাত্রায় অশ্লীল নৃত্যের মাধ্যমে এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তা বন্ধ করতে যান। এ সময় এমপি লিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাহুল হোসেন ও শরীফ আহম্মেদকে লাঞ্ছিত করেন। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন তার টানাপোড়েন চলে।
এ বিষয়ে জানতে এমপি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ও তার সহধর্মিণী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতির মোবাইল ফোনে কল দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে