আদালতে খালেদা জিয়া, আসামিপক্ষের জেরা চলছে

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

khaladaদুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে আদালতে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরা দিয়ে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম।

আদালতে হাজির রয়েছেন মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটা ৩৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা এগারটার পরে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জব্দ তালিকার তিন সাক্ষীকে জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে বৃহস্পতিবার। গত ৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেওয়া ওই তিন সাক্ষী হচ্ছেন- পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম ইসমাইল, জনতা ব্যাংকের সাত মসজিদ শাখার জিএম শেখ মকবুল ও ফাহমিদা রহমান। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে জেরা শুরু করেছেন খালেদা জিয়াসহ এ মামলার জামিনে থাকা আসামিদের আইনজীবীরা।

প্রথমেই সাক্ষী এইচ এম ইসমাইলকে খালেদার পক্ষে জেরা করছেন আব্দুর রেজ্জাক খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন সাক্ষী। বাকি চারজন হচ্ছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, মামলার রেকর্ডিং অফিসার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া এবং জব্দ তালিকার পাঁচ সাক্ষী সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইনসান উদ্দিন আহমেদ, ক্যাশ অফিসার শাহজাহান খান। তাদেরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে।

মামলাটির জব্দ তালিকার অন্য সাতজন সাক্ষীও সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ড. মো. হাফিজুর রহমান, এজিএম মো. আমিরউদ্দিন ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পরিতোষ চন্দ্র দে, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নওশাদ মোহাম্মদ, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার অলোক কান্তি চক্রবর্তী ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম এবং সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম আব্দুল গফুর।

বৃহস্পতিবার আগের সাক্ষীদের জেরা শেষ হলে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণও করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত বলে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ মামলার জেরা-সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

মামলাটিতে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। তাকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের জেরা শেষ হলে এসব সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G