আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস। প্রতি বছর ৯ আগস্ট পালিত হয় দিবসটি। আদিবাসীদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষা প্রদানের স্বার্থে দিবসটি পালন করার জন্য তাগিদ দেয় জাতিসংঘ।
এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘২০১৫ উত্তর এজেন্ডা : আদিবাসীদের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হবে দিবসটি। নানা বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে আদিবাসী সংগঠন ও সংস্থাগুলো।
১৯৯৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপকমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেছে নেয়। আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বের ৭০টি দেশে ৩০ কোটি আদিবাসী বাস করে, যাদের অধিকাংশই অধিকারবঞ্চিত। অনেক দেশে আদিবাসীরা স্বীকৃতিই পায়নি। কোনো দেশে উপজাতি, কোনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয় তাদের।
১৯৯৩ সালকে জাতিসংঘ প্রথমবার `আদিবাসী বর্ষ` ঘোষণা করে। পরের বছর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবছর ৯ আগস্টকে `বিশ্ব আদিবাসী দিবস` হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘ ১৯৯৫-২০০৪ এবং ২০০৫-২০১৪ সালকে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় আদিবাসী দশক ঘোষণা করে।
১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা শুরু হলেও ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বৃহৎ পরিসরে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।মূলত এর পর থেকেই সরকার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই দিবসে সংহতি প্রকাশ করে আসছেন। এবারও বাণী দিয়েছেন তারা।
দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর জেলায়। এ অঞ্চলে প্রায় ৩০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস করে। এদের মধ্য শিং, সাঁওতাল, ওঁরাও, মুন্ডারি, মাহতো, রাজোয়ার, কর্মকার, মাহালী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠী নিজস্ব সংস্কৃতি, লোকাচার, ভাষা ও খাদ্যাভ্যাসে স্বতন্ত্র, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সুনির্দিষ্টভাবে আদিবাসী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বলে ধরা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল, রহনপুর, গোমস্তাপুর, আমনুরা, ভোলাহাট এলাকায়; রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, কাকনহাট, মুন্ডমালা, দামকুড়াহাট এলাকায়, নওগাঁ জেলার খান্দা, নিয়ামতপুর ও পাঁচবিবি, পঞ্চগড়ের আটোয়ারি ও রানীগঞ্জ এলাকায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ তাড়াস, সোনাপাড়া, সেয়া ও জোসাই এলাকায় এবং ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও বগুড়াসহ অন্যান্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদিবাসীরা বহু বছর ধরে টিকে আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় অংশের আদিবাসীদের বাস। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবনে বেশ কয়েকটি আদিবাসীগোষ্ঠী রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়ও অল্পসংখ্যক আদিবাসীদের দেখা যায়। আদিবাসীদের দাবি, তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী (বাঙালি) তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালায় বলেও তারা অভিযোগ করে আসছে। এসব বঞ্চনার বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম ঘোষণা করে তা অব্যাহত রেখেছে।
আদিবাসীদের লড়াইয়ের হাত ধরে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্তব্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তি চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, আদিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। কিন্তু আদিবাসীরা অভিযোগ করে আসছে, চুক্তির পর সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সত্যিকার অর্থে কাজ করেনি এবং করছে না। কিন্তু সরকার বলছে, আদিবাসীদের সুরক্ষায় যথেষ্ট তৎপরতা রয়েছে।
এদিকে আদিবাসী দিবসে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে দিবসটি। পার্বত্য চট্টগ্রামেও হবে নানা অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ আছে, আদিবাসী নয়। এ নিয়েও সরকার ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে।
প্রতিক্ষন/এডি/ইম