আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফারুকীর স্ট্যাটাস
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। আর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে কদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ সরব। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চিত্রপরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।তার লেখাটি হুবুহু তুলে দেয়া হল।
আমি নিশ্চিত এই 7.5% ভ্যাট বাতিল করা হবেই।
তবে শুধু যে এই (সম্ভাব্য) বিজয়ের জন্য এই আন্দোলনকে ভবিষ্যত মনে রাখবে তা না ।
সমাজ পাঠে আগ্রহী যে কোনো মানুষই খেয়াল করে থাকবেন ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতাহীনের জন্য এই আন্দোলন অনেক গুরুত্বপূর্ন ইংগিত রেখে যাবে। আমি ছাত্রদের এই আন্দোলনের দিকে ছাত্র হয়ে তাকিয়ে ছিলাম কিছু শিখব বলে। ইহা আমার “পরিবেশ পরিচিতি সমাজ” পাঠ।
# প্রতিবাদের বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এটা ক্ষমতাবানকে খেয়াল করিয়ে দেয় চাইলেই যা ইচ্ছা তা করা সম্ভব না । এই জন্য গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনের কথা বলা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এইরকম বড় মাত্রার আন্দোলন থেকে ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাহীন উভয়ের জন্যই বার্তা রয়েছে।
# যাদেরকে তথাকথিত বুদ্ধির ট্যাংকরা উঠতে বসতে হেয় করে ফার্মের মুরগী বলে, তাদের জন্য একটা বিনীত জবাব হয়ে থাকবে এই আন্দোলন । এতো বৃহৎ পরিসরের আন্দোলন এতো সুশৃংখল ভাবে এরা কিভাবে করছে এটা ভেবে আমি অনেককেই পেরেশান হতে দেখেছি । এমন না যে এই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয় নাই। সেই চেষ্টা আলবৎ হয়েছে। সব কিছু এড়িয়ে এরা আন্দোলন ধরে রেখেছে এবং সাথে ধরে রেখেছে বেশীরভাগ শহরবাসীর সমর্থন । ব্রাভো!
# সাম্প্রতিক কালে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নগরে আন্দোলন হওয়ার প্রবণতা নাই বললেই চলে। ইদানিং নগরে সংঘটিত আন্দোলন গুলো হয় হয়েছে ইতিহাসের মালিকানা নিয়ে, নয় ঐশ্বরিক বিষয় নিয়ে, আর না হয় ভোট নিয়ে । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বা ভোট নিয়ে আন্দোলন জমিয়ে তোলা কোনো সমস্যা না । কিন্ত যে বিষয় আমার বর্তমানে বসবাসের পথে কাঁটা সেটা নিয়ে এতো বড় আন্দোলন আমাদের বাস্তবতায় সহজ না।
এটা একটা আশার আলো দেখায় । এই আশা আরো বাড়ে যখন দেখা যায় এটা করতে কোনো বড় দল বা নেতা লাগে না ।
# আর কিছু না পেয়ে কেউ কেউ ভাষাতত্ত্বের পুস্তক মেলে এদের হেয় করতে চেয়েছে। যেনো উনারা যে রাজনৈতিক শ্লোগানগুলো দিতেন সেগুলো খুব শালীন বা মহৎ ছিলো। “অমুকের চামড়া তুলে নিবো আমরা”, “জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো “, “একটা দুইটা নাস্তিক / শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর “- এইসব শ্লোগান তো আমরা এর আগে শুনেছি! বরং আমাদের এইসব ছাত্র ছাত্রীরা সমসাময়িক সংলাপ, শব্দবন্ধ দিয়ে এই আন্দোলনে এক দারুণ গতি এনেছে, রিলেটেবল করেছে। ব্রাভো। পন্ডিত মশায়দের বোঝার সময় এসেছে কালিদাসের ভাষায় এই সময় কথা কইবে না।
এমনকি তারা কিছু দারুণ স্ফুফও তৈরি করেছে যেটা নিয়েও দেখলাম অনেকের সমস্যা । আবার এটার উত্তরে এক বোন ব্যাখ্যাও দিয়েছে। বোন এবং ভাই আমার, তোমার প্যারোডির ব্যাখ্যা দিতে যেও না । এটাকে পলিটিক্যালি কারেক্ট করার চেষ্টার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।
# সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিলো প্রাইভেট পাবলিক ক্যাচাল লাগানোর চেষ্টা । তোমাদের দুই দলকেই অভিনন্দন এই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য । বাংলাদেশ তোমাদের সকলের,তোমরা সকলেই বাংলাদেশের ।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে