আপনার সন্তানকে বাস্তবতা থেকে দূরে রেখেছেন?
শারমিন আকতার:
বাবা-মা তার সন্তানকে খুব ভালবাসবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সন্তানকে ঠিক কীভাবে সবকিছু শেখাবেন, মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবেন; তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। কেউ অসম্ভব রাগ দেখান আবার কেউবা আদর দিয়ে মাথায় তোলেন। এখানে রবি ঠাকুরের কথাটা বেশ প্রযোজ্য: ‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে’। মনে রাখবেন, ‘পরিস্থিতির চাহিদা’ বলে একটা শব্দ আছে। অর্থাৎ পরিস্থিতি দেখে আপনাকে বুঝে নিতে হবে এখন ঠিক কী করা উচিত। এটাই সবচেয়ে সঠিক এবং যথোপোযুক্ত।
প্রায় সব বাবা-মা’ই ভেবে থাকেন, আমার সন্তানকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ-শান্তিতে ভরিয়ে দেব; যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি। খুব ভালো কথা। কিন্তু আপনি যখন থাকবেন না তখন কে তাকে এ শান্তির ব্যবস্থা করে দেবে? তাকে আপনি এমন একটা পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন; যেখানে সবকিছু সুন্দর, কোনো দু:খ নেই, কষ্ট নেই। এও কি সম্ভব, দু:খকষ্টহীন পৃথিবী?তাহলে এত বড় একটা মিথ্যা দিয়ে কেন তাকে বড় করছেন? কেন তার ভবিষ্যৎ জীবনটাকে হতাশায় ভরিয়ে দেবেন? কেন তাকে বাস্তবতা শিখতে দিচ্ছেন না?
যখন সে বুঝতে শিখবে তখন হঠাৎ এত কঠিন পৃথিবী দেখে সে এতটাই অবাক হয়ে যাবে যে, কী করা উচিত তা আর বুঝে উঠতে পারবে না। তখন চরম হতাশায় পড়ে যাবে। নিজেকে তখন অযোগ্য ভাবতে শুরু করবে। কেউ কেউ আবার এখান থেকেই হতাশার রাস্তা চিরদিনের জন্য বেছে নেবে। তার ধারণাই হয়ে যাবে, পৃথিবীটা আগে ভালো ছিল কিন্তু এখন আর সেরকম নেই।
আসলেই কি তাই? মোটেও না। যেমন কঠিন আগেও ছিল এখনও ঠিক তেমনই কঠিন আছে। তবে তফাৎ একটাই, তার কাছ থেকে এ চরম সত্যটা আগে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল পরম ভালবাসার অনুভূতি থেকে। আজ তার বাবা-মায়ের সেই ভুল সিদ্ধান্তটিই তার জীবনের ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই মনে রাখবেন, সন্তানকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বড় করবেন না। সত্যকে চিনতে দিন একটু একটু করে। যাতে বড় হওয়ার পর তাকে অবাক হয়ে যেতে না হয়।
এছাড়া মিথ্যার কাছে কখনও মাথা নিচু করতে হয় না; এ সত্যটাও তাকে জানিয়ে দিন একেবারে ছেলেবেলা থেকে। তাকে এও বুঝিয়ে দিন আপনার প্রতিদিনের কাজের মধ্য দিয়ে, যা অন্যায় তা শেষ পর্যন্ত অন্যায় হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ ধরণের বিষয়ে কখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন না। বিশেষ করে সন্তানের সামনে। তার কাছে এই ধারণাটিই পৌঁছে দিন, ‘অন্যায়কে আমার বাবা-মা কখনও প্রশ্রয় দেয় না। তবে যদি তা ন্যায়সংগত হয় তাহলে সবার আগে তারাই অনুমতি দিয়ে দেবেন।’
আপনার সন্তানকে খুব ছোটবেলা থেকে এ অভ্যাসের সাথে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন। তাহলে বড় হয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে ঘাবড়ে যাবে না।
সন্তানরা নিজেদের ইচ্ছা পূরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে; বুঝে অথবা না বুঝে। তবে যাই হোক, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে; সে আপনার চেয়ে ছোট, বুদ্ধিতে এবং অভিজ্ঞতায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: গুছিয়ে খুব সুন্দরভাবে মিথ্যা বলে নিজের ইচ্ছা পূরণ করা, কান্না এবং রাগ এ দুয়ের মিশ্রণে নিজের দাবি আদায় করে নেওয়া।
তাই রয়ে সয়ে চলুন, পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিন তাৎক্ষণিকভাবে। আগে থেকে ভেবে রাখা বা চলে আসা সিদ্ধান্ত দিয়ে কখনও বিচার করতে যাবেন না। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, যা আগে দেখা যায়নি। তাই সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তানকেও এ সবকিছুর সাথে পরিচিত করে তুলুন ধীরে ধীরে। তাহলে সে হয়ে উঠতে পারবে একজন সত্যিকারের সময়োপযোগী মানুষ।