আমাদের স্বপ্নতরী শাটল
নুজহাত তাবাসসুম :
ঘড়ি চক্রে যেমন নতুন একটি দিনের সূচনা হয় আর সেই ভোরের স্নিগ্ধতা আর পাখির কলরব প্রতিটি মানুষের মনে নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে, ঠিক তেমনি প্রাণের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম ভাঙ্গে শাটলের হুইসেলে। মনে হয় যেন এই একটা হুইসেলই এক ঝাঁক পাখি হয়ে পুরো ক্যাম্পাসের কানে কানে বলে যায়, -“সকাল তো হয়েই এলো!!! আরো ঘুমিয়ে থাকবি রে- বোকা?” চবির অসংখ্য ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হলো এই শাটল।
১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্ভরযোগ্য বাহন হিসেবে শাটল ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ২টি শাটলে প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। ট্রেনগুলো বটতলি রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন এবং সেখান থেকে বটতলি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী যাতায়াত করে। বিশ্বের যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা আছে তার একটি হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
শাটলের এই ৬০ মিনিটের যাত্রা কত না স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছে! হয়তো কারো প্রথম প্রেম কিংবা কারো বিচ্ছেদের সাক্ষী। তাই তো, শাটল আর চবির শিক্ষার্থীরা যেন একসূত্রে গাঁথা। কেননা হাসি-কান্না আর বন্ধুত্বের এক মিলনমেলা এই শাটল। আর এই ৬০ মিনিটের যাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে
১৭-১৮ সেশনের নবীন শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসাইন বলেন “১লা জানুয়ারি আমার প্রথম শাটল যাত্রা। অনেকের সাথেই পরিচয়। নতুন বন্ধুত্বের সৃষ্টি, সব মিলিয়ে জীবনের একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল প্রথম শাটল যাত্রা।”
অন্যদিকে এই শাটলই যেন বিনোদনের এক মুক্তমঞ্চ। ছাত্রছাত্রীরা নিজস্ব প্রতিভার গুণে দীর্ঘ এই যাত্রাকে মাতিয়ে রাখে। তাই হয়তো কারো কারো সারারাত প্রতীক্ষায় কাটে কবেই না আবার নতুন একটি দিনের শুরু হবে…“শাটলকে এত বেশি মিস করি যে, শুধুমাত্র শাটলে চড়ার জন্যই মাঝেমাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয়। বিশেষ করে শাটলে আমাদের গান, আড্ডা খুব বেশি মিস করি। কেননা, এই চলন্ত আড্ডা আর কোথাও পাওয়া যায় না’- জানালেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী সানাউল্লাহ হাসান।
মনোরম চবি যেমন ছয় ঋতুতে ছয় রূপের রাণী, তেমনি ঋতুর পালাবদলে শাটল যাত্রায়ও আসে বৈচিত্রতা। গ্রীষ্মের দুপুরের সেই ক্লান্ত-শ্রান্ত অনুভূতি কিংবা বর্ষার জলরঙে রাঙিয়ে দেওয়া স্নিগ্ধতা। কখনো কখনো শরতের মেঘের ভেলায় কাশফুলের মনোরম দৃশ্য! হয়তোবা কনকনে শীতের সকালে জানালা দিয়ে চোখ ফেললেই যেন চিকচিক করে খেলা করে সবুজ মাঠের শিশির বিন্দু আর হালকা বাতাস ও মিষ্টি রোদের ছোঁয়া যেন মনকে রাঙিয়ে দিয়ে যায়।
মাঝে মাঝে এই শাটলই ছাত্রছাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে। কেননা জানালা দিয়ে ঢিল ছুড়ে মারা কিংবা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে থাকে এখানে। সব কিছুর উপরে স্বপ্নপুরী চবির মধ্যমণি হলো প্রাণের শাটল। এ শাটলেই না লেখা আছে কতই না সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প। প্রতিদিন শহরের যান্ত্রিক কোলাহলকে পেছনে ফেলে ছুটতে থাকা এই শাটল দিন শেষে আবার এই কোলাহলেই ফিরে আসে।
শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদকিতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/রন