আমি চলে যাবো : জাফর ইকবাল

প্রকাশঃ আগস্ট ৩১, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

জেলা প্রতিবেদক

j fশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আপনাদের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি থাকবো না। চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই আপনারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন।

জাফর ইকবাল আরো বলেন, এর আগেও এখান থেকে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা সেটা করেছে।আমি তাদের কাছে মাথা নত করিনি।

এখন চলে গেলেও সান্ত্বনা থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলে দাবিদারদের সময়েই চলে গেলাম। এখন গেলে যে সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে তাদের কাছে মাথা নিচু করে বিদায় নেয়া হবে।

সোমবার দুপুরে ক্ষোভ, অপমান আর কষ্ট নিয়ে এই কথাগুলো বলেন তিনি। ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে দুপুরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে এমন আবেগময় কথা বলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এই শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ এই সমাবশের আয়োজন করেন।

সমাবেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরো বলেন, এর আগে আপনাদের কর্মসূচিতে আমি কখনো আসিনি। কারণ সব সময় বলা হয়, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। রাজনীতি করছি। সবাই বলে, এই দম্পত্তি চলে গেলেই ভালো। এতো অপমান নিয়ে থাকা যায় না। একবার চলে যেতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করলো যে জন্য আর যাওয়া গেলো না।

তিনি বলেন, আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন থাকলেও ওইসব কারণে আমি আসতাম না। কিন্তু যখন শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হলো, তখন আর বসে থাকতে পারলাম না। আমি একমাত্র মানুষ যাকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টি, হেফাজত, বাম সংগঠনগুলো একযোগে অপছন্দ করে।এখন আওয়ামী লীগও অপছন্দ করে। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই, আমরা এখানে এমন কিছু ছাত্র সৃষ্টি করেছি যাদের ব্যবহার করা যায়, যারা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে। এই ব্যর্থতার দায় আমার।

জাফর ইকবাল আরো বলেন, শরীরে আঘাত লাগলে সেরে যায়। শরীরের ব্যথা ভালো হয়, কিন্তু মনের ব্যথা ভালো হয় না। আমাদের মনে আঘাত লেগেছে। আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয়। অথচ সবাই বসে বসে সে দৃশ্য দেখে। কেউ প্রতিবাদ করে না।

শাবিতে তার শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিচারণা করে জাফর ইকবাল বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে সুবর্ণ সময় এখানে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে। তাই যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়টা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন খুব কষ্ট লাগে। এখন বুড়ো হয়ে গেছি, আর সহ্য করতে পারি না।

উপাচার্য বিরোধী চলা শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলন প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, এটা বোকাদের আন্দোলন।এর মতো বোকাদের সমাবেশ আর নাই। ক্লাস পরীক্ষা সব কিছু ঠিকঠাক মতো নেয়া হচ্ছে, আবার আন্দোলনও হচ্ছে, এদেশে এভাবে কখনো দাবি আদায় হয় না। এমন অহিংস আন্দোলন কর্মসূচি দেখে মহাত্মা গান্ধীও লজ্জা পেতেন। অথচ এই আন্দোলন কর্মসূচির বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শাবিতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে সকল বিভাগের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত ছিলো। কর্মবিরতি শেষে তারা মিছিল ও সমাবেশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’এর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ শরাফউদ্দিন, অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, আব্দুল্লাহ আল শোয়েব, এমদাদুল হক, মোস্তফা কামাল মাসুদ, আল আমিন রাব্বী, সৌরভ রায় প্রমুখ।

উল্লেখ্য, রোববার সকালে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রোববার সকাল ৮টায় প্রশাসন ভবন-২ (উপাচার্য ভবন) এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন জাফর ইকবালের স্ত্রী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক।

প্রতিক্ষণ/এডি/তাফ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G