আমেরিকানরা বাঙালির নিকট আত্মীয়!
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
আমেরিকানরা বাঙালির নিকট আত্মীয়! অর্থ্যাৎ বাঙালির আদি পূর্বপুরুষ এবং প্রথম আমেরিকান (অর্থাৎ প্রথম যারা আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছেছিল) অভিন্ন। কিছুদিন আগে প্রত্নতাত্ত্বিক এক গবেষণায় এই চমকপ্রদ তথ্যটি আবিস্কৃত হয়েছে। এই আবিস্কার বাঙালির শেকড়ের সঙ্গে সর্ম্পকিত বলেই একই সঙ্গে এই নৃতাত্ত্বিক আবিস্কারটি অত্যন্ত রোমাঞ্চকরও।
‘আউট অব আফ্রিকা’ তত্ত্ব অনুযায়ী আধুনিক মানুষ আফ্রিকায় উদ্ভূত এবং বিবর্তিত হয়ে এককালে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই তত্ত্ব অনুযায়ী হোমো সাপিয়ান্স বা আধুনিক মানুষ ২ থেকে ১.৫ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় বিবর্তিত হয়েছে, তারপর হোমো সাপিয়ান্সদেরই একটি দল আজ থেকে প্রায় ৬০,০০০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে বেড়িয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে এদেরই বংশধররা (আজ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে) প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষে তথা প্রাচীন বাংলায় পৌঁছায়। কেননা, প্রাচীন বাংলার অবস্থান প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের পূর্বকোণে।
আধুনিক মানুষ এরপর ভারতবর্ষ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে পৌঁছেছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। তাদের যাত্রাপথে পড়েছিল বর্তমানকালের মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দ্বীপরাষ্ট্র। সুদীর্ঘকালের এই মাইগ্রেশনের সময় আধুনিক মানুষ বিশেষ নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। অর্থাৎ, আধুনিক মানুষের মরফোলজিক্যাল(অঙ্গসংস্থান সংক্রান্ত)পরিবর্তন হয়েছিল। যারা ভারতে এসেছিল এবং ভারত থেকে এরপর অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে গিয়েছিল তাদের চেহারা পূর্বপুরুষ আফ্রিকানদের থেকে অনেকখানি বদলে গিয়েছিল।
প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষ থেকে যারা ৪০,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পৌঁছেছিল তাদের বংশধরেরা আজও অস্ট্রেলিয়ায়
বেঁচে আছে; যাদের আমরা অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী বলে থাকি।অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের চেহারা এবং জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীর চেহারা একইরকম। নৃবিজ্ঞানীরা এটি প্রমাণ করেছেন। এ কারণে প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীর (যারা বাঙালির পূর্বপুরুষের ) নাম হলো প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা আদি-অস্ত্রাল। এই প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা আদি-অস্ত্রালই বাঙালির পূর্বপুরুষ।
আধুনিক মানুষের মুখের চেহারা আরেকবার বদলে গিয়েছিল। হোমো সাপিয়ান্সরা আজ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে পূর্ব এশিয়ায় অর্থাৎ কোরিয়া, জাপান এবং সাইবেরিয়ায় পৌঁছায় । উত্তর-পূর্ব এশিয়ার তীব্র শৈত্য প্রবাহ, কম সূর্যালোক, খাদ্যাভাস এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হোমো সাপিয়ান্স এক বিশেষ মরফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এই মরফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যকে ‘মঙ্গোলয়েড’ বলা হয় । এই মঙ্গোলয়েডরা ছিল যাযাবর শিকারী এবং খাদ্য সংগ্রহকারী। অর্থাৎ, নৃতত্ত্বের পরিভাষায় যাদের বলা হয়: হান্টার- গেদারার। তারা তুষারে ঢাকা অরণ্যে বলগা হরিণ বা রেইনডিয়ার শিকার করতো।
আজ থেকে দশ/পনেরো হাজার বছর আগের কথা। যখন সাইবেরিয়ার যাযাবর মঙ্গোলয়েড জাতি বলগা হরিণের পিছন পিছন সাইবেরিয়ার একেবারে পূর্ব প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর তারা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকায় পা রাখে। বেরিং প্রণালী আজ থেকে দশ/এগারো হাজার বছর আগে জমাট বরফে ঢাকা ছিল। যার ফলে সেখানে তৈরি হয়েছিলএকটি ‘ল্যান্ডব্রিজ’ । যে কারণে সাইবেরিয়ার যাযাবর মঙ্গোলয়েডরা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে আমেরিকার আলাস্কায় পৌঁছতে সক্ষম হয়।
১৯৭৫ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যানি লামিং ইম্পেরাইর ব্রাজিলের পূর্ব প্রান্তের লাপা ভেরমেলহা অঞ্চলের একটি শৈলগুহায় (রক সেল্টার) একটি খুলি আবিস্কার করেন। তিনি খুলিটির নাম দেন ‘লাপা ভেরমেলহা ফোর হোমিনিড ওয়ান।’ প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যানি লামিং ইম্পেরাইর খুলির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন নি। তার আগেই তিনি মারা যান।
পরবর্তীতে ব্রাজিলিও অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস লাপা ভেরমেলহায় পাওয়া খুলিটি বিশ্লেষন করেন। তার আগে তিনি খুলিটির নাম বদলে রাখলেন: ‘লুজিয়া’। অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বলেন যে লুজিয়া আজ থেকে ১২,৫০০ বছর আগে বেঁচে ছিল। এই বিষয়টিই ঝড় তুলেছে। কারণ এতদিন মনে করা হতো যে, প্রথম আমেরিকানরা ছিল মঙ্গোলয়েড। যারা ১১,৫০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক আমেরিকায় ক্লোভিস সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তার মানে লুজিয়া আরও ১০০০ বছর প্রাচীন।
অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস এর গবেষণায় আরও প্রমাণ হয় লুজিয়া মঙ্গোলয়েড নয়- অস্ট্রালয়েড! অর্থাৎ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যারা ভারতবর্ষ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে পৌঁছেছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। সাইবেরিয় মঙ্গোলয়েডরা আমেরিকায় পৌঁছানোর আরও ১০০০ বছর আগেই লুজিয়ার পূর্বপুরুষ পূর্ব এশিয়া থেকে সাইবেরিয়া অতিক্রম করে আমেরিকায় এসেছিল এমন একটা সময়ে যখনও তারা মঙ্গোলয়েড বৈশিষ্ট্য অর্জন করেনি। তার মানে লুজিয়ার পূর্বপুরুষ ছিল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অস্ট্রালযেড। আর এই অস্ট্রালয়েডই বাঙালির পূর্বপুরুষ ।
তথ্য সূত্র: বিবিসি, উইকিপিডিয়া,ডক্টর এলিস রবার্টস পরিচালিত পাঁচ পর্বের প্রামাণ্যচিত্র ‘ইক্রিডিবল হিউম্যান জার্নি’।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল