ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কী শেখানো হয়?
শারমিন আকতার:
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর থেকে আমাদের সবার মনে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। এখানে আসলেই কী শেখানো হয়, তা কি স্বয়ং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া বাচ্চার অভিভাবকরা জানেন? যা শেখাচ্ছে তার কতটুকু সঠিক আর ভুল এ নিয়ে কি কোনো মাথাব্যথা তাদের আছে? নাকি ইংরেজ বানানোর মিথ্যা মরিচিকার পেছনে ছুটছেন? একবার ভেবে দেখেছেন, আপনার সন্তানকে প্রয়োজনীয় বাস্তমুখী সব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কিনা? ইংরেজি বুলি আওড়ালেই কি আপনার সন্তান যোগ্য মানুষ হয়েছে বলে মনে করেন? আপনি কি নিজের বাচ্চাকে ভালোভাবে চেনেন?
অনেক প্রশ্ন করে ফেলেছি। এবার এই অভিভাবকদের কাছে তা জানতে চাই।
চলুন আমরা জেনে নিই আসলেই কী কী শেখানো হয় এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যা শেখানো হয়:
১. কীভাবে ইংরেজ হওয়া যাবে সে মিথ্যা স্বপ্নে বিভোর করে রাখে।
২. নিজের দেশ, ভাষা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, দেশের মানুষের সংগ্রামের কথা শেখানো হয় না।
৩. তার পরিবর্তে ইংরেজদের গুণকীর্তন করা হয়।
৪. তাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাই এমন, যেন এ দেশে কোনো গুণী লোক বাস করে না। সব থাকে পশ্চিমের দেশে।
৫. মূল্যবোধের কোনো শিক্ষাই এখানে দেওয়া হয় না।
৬. ধর্মীয় সঠিক জ্ঞানের কোনো প্রয়োজনীয়তায় এরা অনুভব করে না।
৭. এদেরকে জীবনের চরম সত্যের সাথে কখনও পরিচয় করানো হয় না।
৮. পৃথিবীতে ‘কষ্ট’ বলে যে একটা শব্দ আছে, তা এই ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে খুব সাবধানতার সাথে স্কুল পরিচালনাকারীরা লুকিয়ে রাখে।
এতে যা হয় এই ছাত্রছাত্রীদের:
১. বাংলা ভাষাকে একেবারে ভালবাসে না
২. বাংলাদেশকে অপছন্দ করে
৩. নিজের দেশ, ভাষা, মানুষ এবং সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না
৪. ইংরেজিই তাদের প্রাণ; বাংলা ভাষায় সঠিকভাবে কথাও বলতে পারে না
৫. দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় তাদের একমাত্র লক্ষ্য
৬. নিজের দেশকে তারা খুব খারাপ দেশ মনে করে
ফলাফল কী দাঁড়ায়:
১. বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে, বাংলা ভাষাকে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এরা প্রচন্ডভাবে অপছন্দ করতে শুরু করে।
২. নিজেকে একজন পরিপূর্ণ ইংরেজ হিসেবে তৈরি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে।
৩. কথায় কথায় ইংরেজি বুলি আওরায়।
৪. চিরদিনের জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়।
৫. ‘ভালবাসা’ নামক একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তারা কখনও ভালোভাবে জানতেই পারে না। তাদের কাছে সাময়িক ‘মোহ’ টাই সব।
৬. আর আমরা কিছু মেধাবী তরুণ-তরুণীকে জীবনের বাকি সময় ইংরেজ হওয়ার অসম্ভব একটা মিথ্যা স্বপ্নে বিভোর হয়েই জীবন কাটাতে দেখি।
শিক্ষণীয়: নিজের রক্তের পরিচয় যারা ভালোভাবে জানে না, তারা কি কখনও ভালবাসতে জানবে? তাই নিজের আপনজনদের চেনার চেষ্টা করুন। নিজের দেশের দু:খ-কষ্ট-আনন্দের সাথে একাত্ম হোন। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন,সঠিকভাবে তা জানার চেষ্টা করুন; ভুল ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে যেন আপনাকে কেউ বিপথে নিয়ে যেতে না পারে। তাহলে দেশ ভালো থাকবে, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। আর এরা ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
শারমিন আকতার
প্রাক্তন শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল
=====