ইসলামে মানুষ হত্যা মহাপাপ

প্রকাশঃ মার্চ ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

imagesঅশান্তির আগুনে ঘেরা পৃথিবী। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভরা অবনী। এ পৃথিবীতে এখন মানবজীবনের চেয়ে সস্তা কিছু নেই। বিশেষত বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় মাত্র ১০ টাকার জন্যও মানুষ খুন হচ্ছে।

মিডিয়ায় কান পাতলে কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই নিহতের স্বজনের আহাজারী আর মাতমের দৃশ্য থাকবেই।

সন্তানের হাতে জন্মদাতা কিংবা জন্মদাতার হাতে সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, শিক্ষকের হাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষক, কর্মচারীর হাতে মালিক কিংবা মালিকের হাতে কর্মচারী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সাধারণ নাগরিক কিংবা নাগরিকের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য খুন- কোনোটাই যেন এখন আর অস্বাভাবিক নয়!

এদিকে কথিত উন্নত ও সভ্য দেশগুলো মোড়লিপনা দেখাতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালিয়ে খুন করছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে। যারা মুসলিম দেশগুলোকে মানবাধিকারের সবক দেয়, তারাই আবার মজলুম মুসলিম দেশগুলোয় প্রতিদিন নিষ্পাপ শিশু ও অসহায় নারী ও বৃদ্ধদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করছে। পৃথিবীর মানচিত্রজুড়েই এখন মুসলিমের তপ্ত খুনের ছোপছোপ দাগ।

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মতো বাংলাদেশের নাগরিকরাও এ হত্যা-নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণ খুঁজে ফিরছে। মুক্তির অন্বেষায় তারাও যত্রতত্র ধর্ণা দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে। এমতাবস্থায় আর সব সমস্যার মতো এর সমাধানেও ইসলামই হতে পারে হতাশায় আলোকদিশা। উপায়হীনের অব্যর্থ উপায়। সেটি হলো, আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তুলে ধরতে হবে ইসলামের অমলধবল আলোকশিখা।

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বড় গুনাহসমূহের। শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হন্তারকের জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন।

যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বল, “এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিয্ক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।”’ {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}

তাফসীরকার বাগবী (রহ.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ যে কোনো মুমিন ও মুসলিম রাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানকারী অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা হারাম ঘোষণা করেছেন। হত্যার ন্যায়সঙ্গত কারণের মধ্যে রয়েছে ইরতিদাদ তথা কোনো মুসলিমের ইসলাম ধর্মত্যাগ, কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা এবং রজম তথা বিবাহিত ব্যক্তির জেনা-ব্যভিচারের দণ্ড। [মা‘আলিমুত তানযীল : ৩/২০৩]

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।’ [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ৬৮-৬৯]

কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে ইসলাম তার প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা সেই নাফসকে হত্যা করো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না; নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত। [ সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৩৩]

প্রতিক্ষণ/এডি/অাকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G