ইসলাম জঙ্গিবাদ অনুমোদন করে না
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে ইদানীং জঙ্গিবাদ সমস্যা মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। ইসলামের নামে জঙ্গিরা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলাম কি আসলেই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে? না, ইসলাম কোনভাবেই জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। পবিত্র আল-কুরআন ও হাদীসে বারবার নিরপরাধ মানুষ হত্যা না করতে এবং পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি না করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
যেমন পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না।’
আল্লাহপাক আরো বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ তথা দাংগা হাংগামা করে বেড়িও না।’
‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’
وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلاَ تَبْغِ الْفَسَادَ فِىْ الأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’
আল-কুরআনের আরেক জায়গায় আছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না।’
মহান আল্লাহ ফিত্না সম্পর্কে ইরশাদ করেন :
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِنْدَ اللّهِ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَِتْلِــ
‘আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ।
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ـ
‘আর ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’
উপরোক্ত আয়াতসমূহে ফিতনা-ফাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা জঙ্গিবাদকে হত্যার চেয়েও কঠিন ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের অপরাধ হত্যার সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘নর হত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য কাজ কিন্তু কোনো মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক ও যুল্মতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং যুক্তির পরিবর্তে পাশবিক শক্তি প্রয়োগে জীবন গঠন ও সংশোধনের বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে তখন সে নরহত্যার চাইতেও জঘন্যতম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়।
এছাড়া পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা আল্লাহ ঘোষণা করেন :
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوْا أَوْ يُصَلَّبُوْا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلافٍ أَوْ يُنْفَوْا فِى الأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْىٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌــ
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।’
অতএব, ইসলাম জিহাদের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যা অর্থ্যাৎ জঙ্গিবাদকে কখনোই সমর্থন করে না। তাই জঙ্গিবাদ দমনে প্রকৃত ইসলামকে জানা খুব জরুরি। একমাত্র সত্যিকার ইসলামি জ্ঞানই পারে সমাজকে জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে।
জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আরেকটি জঘন্য অপরাধ করে থাকে তা হলো মানব হত্যা। এটা বিভিন্নভাবে করে থাকে, গুপ্তভাবে, পেছন থেকে, বোমা মেরে কিংবা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে। অথচ মানব জীবন মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىْ آدَمَ وَحَمَلْنهُمْ فِىْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنهُمْ مِّنَ الطَّيِّبتِ وَفَضَّلْنهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً
“নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্ত্তর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।”
সেজন্য মহান আল্লাহ একজন মানবের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন। মানব জীবনের নিরাপত্তার প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্মে বা মতাদর্শে এর নযির নেই।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِىْ إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِى الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًاــ
‘এ কারণে আমি বনী ইসরাইলকে এরূপ লিখে দিয়ে ছিলাম যে, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কিংবা ভূ-পৃষ্ঠে কোন গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়াই কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো আর যে ব্যক্তি কোন একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।’
যে ব্যক্তি সংগত কারণ ছাড়া একজন মানুষকে হত্যা করে সে কেবল একজন মানুষকেই হত্যা করে না, বরং সে সমগ্র মানবতাকে হত্যা করে, অর্থাৎ সে একজন মানুষকে হত্যা করে এ কথাই প্রমাণ করলো যে তার মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায় অন্য মানুষের প্রতি সামান্যতম সম্মান, মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির চিহ্ন নেই। সেজন্য মহান আল্লাহ সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা যেভাবেই হোক না কেন নিষিদ্ধ করেছেন।
এ সকল আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে ইসলাম জঙ্গিবাদ অনুমদন করে না। তাই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদকে জায়েজ করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া