উত্তরায় বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাড়িতে মনোয়ারা সুলতানা (৬৪) নামের এক বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর খুনিরা দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে যায়। রবিবার উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বাড়ি থেকে দরজা ভেঙে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে। পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সোফার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর মৃতদেহ।
মনোয়ারা সুলতানা লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফের মা। খালেদ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত।এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হত্যার ধরন ও আলামত দেখে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার ধারণা এসেছে। বাসার আলমারি ভাঙা থাকলেও সেখান থেকে কিছুই খোয়া যায়নি। স্বর্ণালংকারসহ দুই লাখ টাকা ছিল, তা নেয়নি। এ অবস্থায় বাড়িটিতে যাদের যাতায়াত ছিল, তাদের সন্দেহের আওতায় নিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে মেসের ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মনোয়ারা সুলতানার দুই ছেলে প্রবাসী। আরেক ছেলে লে. কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। স্বামীর মৃত্যুর পর কার্যত তিনি একাই বাড়িটিতে বসবাস করতেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, বৃদ্ধাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে সোফায় বসিয়ে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। রবিবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন করা ময়নাতদন্তে এমন ধারণাই মিলেছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত খুনি শনাক্ত করা যায়নি। বৃদ্ধাকে হত্যার পেছনে জোরালো কোনো কারণও মিলছে না। সব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত চলছে। বাড়ির ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
এসআই মামুন মিয়া জানান, শনিবার রাতে মনোয়ারার সাড়া না পেয়ে ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া ফোন করেন বৃদ্ধার ছেলে লে. কর্নেল খালেদ ইবনে ইউসুফকে। এরপর স্বজনরা ফোন করে মনোয়ারাকে না পেয়ে পুলিশকে অবহিত করে। এরপর ভোরে পুলিশ টিম বাসার দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। ড্রয়িংরুমে সোফায় বসানো অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। নিহতের গলা কাটা ছিল, মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ঘরের ভেতর বিভিন্ন আসবাব এলোমেলোভাবে পড়ে ছিল।
স্বজনরা জানায়, নিহত মনোয়ারার স্বামী আবু মোহাম্মদ ইউসুফ ছিলেন চিকিৎসক। তিনিই উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের পাঁচতলা ১১ নম্বর বাড়িটি তৈরি করেন। কয়েক বছর আগে স্বামী মারা গেলে মনোয়ারা বাড়িটির দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইকবাল ইবনে ইউসুফ অস্ট্রেলিয়ায়, মেজ ছেলে খালেদ বিন ইউসুফ চট্টগ্রাম ক্যান্টমেন্টে লে. কর্নেল হিসেবে কর্মরত এবং ছোট ছেলে আরমান ইবনে ইউসুফ আমেরিকায় থাকেন। ঘটনার সময় বাসায় স্বর্ণালংকার ও দুই লক্ষাধিক টাকা থাকলেও তা খোয়া যায়নি। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিরোধের তথ্য জানা নেই ঘনিষ্ঠদের।
ভাই মির্জা আজম বেগ বলেন, মনোয়ারার সঙ্গে একজন গৃহকর্মী থাকত। তিন-চার দিন সে অনুপস্থিত ছিল। এ অবস্থায় চার তলার এক ভাড়াটিয়া খাবার দিত। এই ভাড়াটিয়া নিজে অথবা কারো সহায়তায় খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ও জবাই করে মনোয়ারাকে হত্যা করতে পারে বলে সন্দেহ হচ্ছে। মনোয়ারা দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরব ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় অনেক স্বর্ণালংকার কিনেছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণ জমিয়েছেন। চার তলার ওই ভাড়াটিয়া সোনার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে হত্যা করতে পারে। হত্যার পর সোনার জন্য বাসার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানোর আলামত পাওয়া গেছে। সোনা ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রহস্য উদ্ঘাটনে বাড়িটির অন্তত ১৭ জন ভাড়াটিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন ব্যাচেলর শিক্ষার্থী রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরার বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও র্যাব। উপস্থিত র্যাব-১-এর ডিএডি শাহজাহান বলেন, বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বেশ কয়েকজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থী মেস করে ভাড়া থাকত। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া