উপজাতি গ্রাম ‘মঙ্গলপুর’
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রূপ, লাবণ্যের কথা বলে শেষ করা যায় না। যতই বলি মনে হয় যেন কম বলা হয়েছে। এদেশের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চিরকাল ধরে মুগ্ধ কবি চিত্তে কাব্যস্রোত বইয়ে দিয়েছে,ভাবুকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় ভাবের ঢেউ জাগিয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে যে কোন দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন চোখ দুটো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে ধন্য হয়, মনপ্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে। এমনি অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মৌলভীবাজারের মণিপুর উপজাতি গ্রাম। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুর উপজাতি গ্রাম যা স্থানীয়দের কাছে মংগলপুর গ্রাম নামে পরিচিত।
মণিপুর উপজাতি গ্রাম! মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থেকে মাত্র আড়াই মাইল পূর্বে ভারতের সীমান্ত । সীমান্তের অপর পাড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসর মহুকুমার অন্তর্গত মূর্তিছড়া চা বাগানের অবস্থান। পশ্চিম পাশ জুড়ে বিখ্যাত লাগাটা নদী, তার পশ্চিম কূলে প্রাচীন ঐতিহাসিক মংগলপুর গ্রাম, এখানে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বাস । তার পশ্চিমে ডবল-ছড়া, লাউয়া ছড়া পর্যটন কেন্দ্র এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ।
দক্ষিণ পাশ দিয়ে ঝির ঝির করে বয়ে চলছে ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি কন্যা খুব ছোট্ট নদী যার নাম সুনছড়া। প্রস্থে ছোট বলে অনেকে নদী না বলে ঝিরি বা ছড়া বলে থাকেন।
শুধু বৈশাখ মাসে নয়, বারোমাসই পা ভেজানো পানি থাকে । তবে যখন অতিবর্ষণ হয় তখন পানি তেলে টইটুম্বুর প্রবল বেগে ভাটির দিকে নেমে চলে। সেই সময়ে সাময়িকভাবে দু’পাশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন গরু ঘোড়া কেন, কোন মানবও খরস্রোতকে উপেক্ষা করে পাড় হতে পারেনা।
সুনছড়ার দক্ষিণ পাশে চিৎলীয়া গ্রাম ও বিশাল হলদির হাওড়। আরও দক্ষিণে ইতিহাস প্রসিদ্ধ আদমপুর, তারও দক্ষিণে পর্যটন কেন্দ্র মাধবপুর লেক, এখানেও মনিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস। দক্ষিণে সদ্য লোক নজরে আসা নয়ন কাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত হামহাম। গ্রামের উত্তর পাশে লাংলিয়া গ্রাম। তার উত্তরে আলিনগর চা বাগান, ৪ মাইল উত্তরে ঐতিহাসিক শমশের-নগর এয়ারপোর্ট অবস্থিত। আরও উত্তরে গেলে লংলার পৃথিমপাশার ঐতিহ্যবাহী নবাব বাড়ি এবং পর্যটন কেন্দ্র মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।
এ গ্রামের প্রধান আকর্ষণ মণিপুরীদের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখা, তাদের কৃষ্টি-আচার ব্যবহারের সাথে পরিচিত হওয়া এবং মণিপুরী নৃত্য, মণিপুরী গান বাজনা, মণিপুরীদের সভ্যতা অবলোকন করা।
যাওয়ার জন্য ঢাকার সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল, গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে বাসে করে ও কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে ট্রেনে করে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। মৌলভীবাজার থেকে বাসে বা যে কোন যানবহনে করে মংগলপুর গ্রামে যাওয়া যায়।
মজার ব্যপার হলো মনিপুরীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠলে তাদের বাড়িতেই আপনি থাকতে পারবেন। এছাড়া থাকার জন্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অনেক আবাসিক হোটেল আছে, ইচ্ছা করলে সেখানেও থাকা যায়।