উড়াল মানবদের কথা

প্রকাশঃ আগস্ট ২৭, ২০১৫ সময়ঃ ১:২৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

সিফাত তন্ময়

uraমেক্সিকোর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের একটি শহর গুতিয়েরেজ জামোরা। প্রতি বছর এখানকার স্থানীয় মেলায় বসে ব্যতিক্রমী এক খেলার আসর। আর সেই খেলায় উড়ে বেড়ানোর মতো কৌশল দেখায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিছু মানুষ।

স্থানীয় ভাষায় এদের বলা হয় ভোলাডোর। স্প্যানিস ভাষায় এর মানে হচ্ছে শূণ্যে উড়ন্ত অবস্থায় বিচরণকারী। মাটি থেকে প্রায় দশ তলা দালানের উচ্চতা সমান একটি ধাতব খুঁটিকে কেন্দ্র করেই উড়ে বেড়ানো আর ঝুলে থাকার কসরত দেখায় ভোলাডোররা। তাদের পরণে থাকে পালক শোভিত উৎসবের পোষাক।

প্রথানুযায়ী পাঁচজন ভোলাডোর আরোহণ করে সুদীর্ঘ খুঁটির শীর্ষে। খুঁটির মাথায় থাকে একটি বর্গাকার ফ্রেম। ফ্রেমের ভেতর খুঁটি সংলগ্ন থাকে বড়সড় একটি লাটাই। ভোলাডোররা খুঁটির মাথায় পৌঁছে প্রথম যার যার কোমরে বাঁধা মোটা রশির আরেক প্রান্ত পেঁচাতে শুরু করে এই লাটাইয়ে। পাঁচজনের একজন দলপতি হিসেবে বসে থাকে খুঁটির মাথায়। সেই মূলত কসরতের নিয়ন্ত্রক। বাকি চারজন যার যার কোমরের রশির ওপর ভর করে আলতো ডাইভ দিয়ে ঝুলে পড়ে মাথা নিচের দিকে রেখে। চার ভোলাডোরের জন্য যার যার কোমরে বাঁধা রশি লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে। রশি একবার ছুটে গেলে সোজা গিয়ে আছড়ে পড়তে হবে মাটিতে। আর এর অর্থ নির্ঘাত মৃত্যু। কোমরে বাঁধা রশির ওপর ভর করে ভোলাডোররা শূন্যে ঝুলে পড়লে তাদের উড়ন্ত কসরত প্রদর্শনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়। সহসা চার ভোলাডোর ওড়ার ভঙ্গিতে শূন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুঁটির ফ্রেম এবং লাটাই ঘুরতে শুরু করে তখন। ura 3

ঝুলন্ত ভোলাডোরদের ভারে পাক খুলতে থাকে লাটাইয়ে জড়ানো মোটা রশিগুলোর। ভোলাডোররা রশিতে পা পেঁচিয়ে মাথাটা নিচের দিকে রেখে ঘুরতে থাকে চরকির মতো। এ সময় তারা উড়ন্ত পাখির মতো হাত দুটো ছড়িয়ে দেয় শূন্যে। চরকির ঘূর্ণন যত বাড়তে থাকে, ততই বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভোলাডোররা। এভাবে দড়ির সম্পূর্ণ পাক খুলতে মিনিট তিনেকের মতো সময় লাগে। মাটির ঠিক কাছাকাছি পৌঁছে আঘাত লাগার আগেই দক্ষ কৌশলে নেমে পড়ে তারা। আর নিচে তখন শ্বাসরূদ্ধকর এই প্রদর্শনী উপভোগের জন্য তাকিয়ে থাকে নীরব হাজারো দর্শক।ura 2

এই উড়ন্ত নাচের পারফরমার মূলত টোটোনাক ইন্ডিয়ানরা। শত শত বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী প্রদর্শনী চালিয়ে আসছে তারা। এক সময় ভোলাডোররা উড়ন্ত নাচের এই প্রদর্শনী করত ধর্মীয় কারণে। সূর্যদেবের তুষ্টির জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন হতো এই প্রদর্শনীর । এখন টোটোনাকরা সবাই রোমান ক্যাথলিক হলেও নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে এরা সযত্নে আঁকড়ে রেখেছে এখনো। বর্তমানে বিভিন্ন মেলা এবং ভোজ উৎসবে ভোলাডোর নামের উড়ন্ত মানবরা দেখায় তাদের এই ঘূর্ণিনাচ। বড়দের কাছ থেকে টোটনাক শিশু-কিশোরেরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ঘূর্ণিনাচের। এছাড়াও প্রদর্শনীতে নানা ভোলাডোরদের সহায়তা করছে তারা।

প্রতিক্ষন/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G