ঐতিহাসিক ‘লালবাগ কেল্লা’

প্রকাশঃ মে ১১, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৪৬ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

front-P01_PM-4লালবাগ কেল্লা পুরাতন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রাসাদ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তৎকালীন লালবাগ কেল্লার নামকরণ করা হয় আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দূর্গ। পরবর্তীতে সুবেদার শায়েস্তা খাঁনের শাসনামলে ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দূর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। সে সময়ে নতুন ভাবে আওরঙ্গবাদ কেল্লা বাদ দিয়ে ‘লালবাগ কেল্লা’ নামকরণ করা হয়। যা বর্তমানেও প্রচলিত।

 নির্মাণের সময়গুলো

Lalbagh-Fortমুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মূলত ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এটির নির্মাণ শুরু হয়। এই দুর্গের নকশা প্রণয়ন করেন শাহ আজম। প্রথমে এটি কেল্লা আওরঙ্গবাদ নামে পরিচিত ছিলো। কিন্তু নির্মাণের এক বছর যেতে না যেতেই সম্রাট আওরঙ্গজেব তার পুত্রকে মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য দিল্লী ডেকে পাঠান। আর তখন নির্মাণ কাজ শেষ না করেই দিল্লী চলে যান আজম শাহ।

সুবেদার এলো ঢাকায়

১৬৮০ সালে সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে শায়েস্তা খাঁ কেল্লার নির্মাণ আবারো শুরু করেন। কিন্তু তার মেয়ে পরী বিবির মৃত্যুর পর ১৬৮৪ সালে কেল্লার নির্মাণ কাজ থেমে যায়। পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল বলে জানা যায়। সুবেদার কন্যার মৃত্যুর পর এই কেল্লাকে অপয়া বলে মনে করা হয়। পরী বিবিকে সমাহিত করা হয় কেল্লার ঠিক মাঝখানে।

১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রায় চলে আসেন। আর উত্তসূরীদের দান করে যান কেল্লাটি। কিন্তু এসময় কেল্লার গুরুত্ব কমতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।OLYMPUS DIGITAL CAMERA

সুরঙ্গ রহস্য

কেল্লায় আগত দর্শনার্থীদের সবচেয়ে আগ্রহের স্থান হলো এর সুরঙ্গ। নানান রকম কল্প কাহিনী শোনা যায় এই সুরঙ্গ নিয়ে। যদিও সেখানে প্রবেশ নিষেধ এবং সুরঙ্গটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এখানে বেশ কয়েকটি সুরঙ্গ আছে, যেগুলো দিয়ে দিল্লী পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। তবে এই সুরঙ্গের আসল রহস্য এখন পর্যন্ত কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। কথিত আছে, বেশ কয়েক বছর আগে বিভিন্ন দেশের কয়েকজন গবেষক এই সুরঙ্গের মধ্যে দুটি কুকুর প্রবেশ করিয়েছিলেন। কিন্তু কুকুর দুটি আর ফেরত আসেনি। পরে শিকল পড়িয়ে আরও দু’টি কুকুর প্রবেশ করানো হলে শিকল দুটি ফেরত আসে। কিন্তু কুকুরের আর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কীভাবে যাবেন

লাgrgfrfলবাগ কেল্লায় যেতে হলে, গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে মাত্র ৬ টাকায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়। ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়গামী দু’ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। এছাড়াও নিউমার্কেট কিংবা গুলিস্তান এলাকা থেকে সরাসরি রিক্সায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা। আর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে (শাহবাগ) থেকে ১০ টাকা ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস রয়েছে লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনে আগ্রহীদের জন্য। এছাড়াও যারা কম টাকায় কেল্লা পরিদর্শন করতে চান তারা সদরঘাট ভায়া গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার হয়ে যেতে পারেন। ভাড়া লাগবে মাত্র ৫ টাকা। গুলিস্তান থেকে ভাড়া লাগবে মাত্র ২ টাকা। তারপর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে অথবা ১০ টাকা রিকশা ভাড়ায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়।

টিকেটের মূল্য তালিকা

দেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য = ১০.০০ টাকা জনপ্রতি

টিকেট প্রাপ্তিস্থান

কেল্লার মূল ফটকের বাইরে দু’পাশে দু’টি কাউন্টার আছে। তার মধ্যে বাম পাশের কাউন্টারটি বন্ধ এবং ডান পাশের কাউন্টারটি খোলা থাকে।

Lalbag-kella.পরিদর্শন সময়সূচী

গ্রীষ্মকালীন: ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৬.০০ টা পর্যন্ত।
দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি।
শুক্রবার: সকাল ১০.০০ টা থেকে ৩.০০ টা পর্যন্ত।
১২.৩০ মিনিট থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি।
শীতকালীন: ১লা অক্টোবর থেকে ৩০শে মার্চ পর্যন্ত সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত।

দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি।
শুক্রবার সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল পর্যন্ত।
দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে ২.০০ টা পর্যন্ত বিরতি।

রবিবার পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে ও সোমবার অর্ধ দিবস পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এছাড়া সরকারী ছুটির দিনগুলোতে লালবাগ কেল্লা পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে।
এছাড়া যেকোন পরিস্থিতিতে লালবাগ কেল্লা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

শায়েস্তা খাঁ নেই, নেই পরী বিবি। নেই আওরঙ্গ পুত্র আজম শাহ। তবে তাদের হাতে গড়া লালবাগ কেল্লা এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে গড়া এই স্থাপনায় আগত দর্শনার্থীরা খুঁজে ফিরছেন সেই ৪০০ বছরের পুরনো ঢাকাকে।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G