ঐতিহ্যবাহী হরিপুরের ‘রাজবাড়ি’

প্রকাশঃ মে ১৩, ২০১৫ সময়ঃ ১:৩০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪০ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

rajbariনাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি। এ বাড়িটিকে কেউ বলে রাজবাড়ি, বড়বাড়ি আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি। বর্তমানে এটা অর্পিত সম্পত্তি।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক আসে বাড়িটি দেখতে। নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত এই বড়বাড়িটি।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান।  নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে উপজেলার শেষ সীমান্তে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদীর পাড়ে চোখে পড়ার মত দুই গম্বুজের তিনতলার সুবিশাল বাড়িটি। বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। অন্যদিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা।

নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত বাড়িটি। কারুকাজ খঁচিত দেয়াল,স্তম্ভ ও কার্নিশ।  সব ক’টি কক্ষেরই পুরানো সেই দরজা নেই।  বর্তমানে বসবাসকারীরা সাধারণ মানের দরজা লাগিয়ে বসবাস করছে।  সব মিলিয়ে ৩০টি পরিবার রয়েছে এখানে।  ১০ থেকে ৭০ বছর ধরে তাদের বসবাস।  বাড়ির ভেতরের অংশে অনেকটা গোছালো পরিবেশ।2

জানা যায়, প্রায় ১৭৫ বছর পূর্বে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নির্মাণ করেন। বৃটিশ আমলে নির্মিত বাড়িটির নির্মাণ শৈলী বড়ই মনোরম।

১৩৪৩ বাংলা ১২ চৈত্র (দোল পূর্নিমা) তারিখে  কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মূত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী।  তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি পান উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী।

কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান। জমিদাররা বাড়িটি ফেলে যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যায়।

এখনও জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধরেরা বসবাস করছে।  বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ অংশ খসে পড়ছে, আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের খুব অল্পকিছু অংশই বিলীন হতে বাকি আছে।

3মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই।  প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ, রং মহল, দরবার হল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, রান্না ঘর, নাচ ঘর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে।

বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই।  লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দু’পাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ স্বগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ঘোষনা করছে, জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা।দু’তলায় ওঠার ৬ দিকে ৬টি সিঁড়ি ও তিন তলায় ওঠার ২ দিকে ২টি সিঁড়ি রয়েছে।  বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং পশ্চিম পাশে ৪টি বেড রুম রয়েছে।

বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী  ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে।

4বাড়িটি দেখার জন্য এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন বনভোজনে আসেন।বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তিতাসে যখন পানি থৈ থৈ করে তখন বাড়িটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়।

বাড়িটিতে কখনো সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি । দিনকে দিন বাড়িটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।এ বাড়িতে ‘‘দি লাস্ট ঠাকুর’’, ‘‘মধুমালতি’’, ‘‘ঘেটু পুত্র কমলা’’ নাইওরীসহ অনেক ছবি চিত্রায়িত হয়েছে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানির বাস ছেড়ে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে। তারপর ঠাকুরগাঁও থেকে বাস কিংবা অটোরিকশায় করে হরিপুর রাজবাড়ি। আপনি চাইলে নদী পথেও যেতে পারেন।

”বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G